আমাদের জীবন-মনন-দর্শন, শিল্প-সংস্কৃতি-শিক্ষা যাঁর আলোকে আলোকিত, তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় সেই জন্মলগ্নে। তখন আমার বয়স মাত্র সাত দিন। ঘরময় ডেটলের গন্ধ, ছোট ছোট জামা কাপড়, কাঁথা, খেলনা, আরো কত কি! এসবের মাঝেই তিনি এলেন।
“খোকা মাকে শুধায় ডেকে-
'এলেম আমি কোথা থেকে,
কোনখানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে।'
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে
খোকারে তার বুকে বেঁধে-
'ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।”
এভাবেই মা আমায় পৃথিবীতে স্বাগত জানাল। উপহার দিল, 'শিশু'। রবীন্দ্র ভাবনার সঙ্গে বেঁধে দিল একরত্তি আমাকে।
এরপর আমার বড় হওয়ার পালা। তখনও অক্ষর জ্ঞান হয়নি, তবু বইখানা হাতে পেলে নাকি খুব খুশি হতাম। পাতা ওল্টাতাম, মন দিয়ে কি যেন দেখতাম। আরেকটু বড় হতেই মায়ের মুখে শুনে শুনে আধো আধো গলায় বলতাম,
“মা গো আমায় ছুটি দিতে বল,
সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা।…”
কিংবা বলতাম,
“বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান-
'বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান।' ”
এসবই পরবর্তীকালে মায়ের কাছে শুনেছি। তবে আমি যে বীরপুরুষ সেজে খেলতাম, লড়াই করে মা কে বাঁচাতাম, সে কথা বেশ মনে আছে। বীরপুরুষ আমার শৈশবে এক স্বপ্নের পৃথিবী তৈরী করেছিল। যেখানে পালকি ছিল, রাঙা ঘোড়া ছিল, ঝাঁকড়া চুলের ডাকাত ছিল, মা ছিল, আর ছিল খোকা (আমি)।
বড় বয়সে যখন 'শিশু' পড়েছি, এক অদ্ভুত নস্টালজিয়ায় আবিষ্ট হয়েছি, ছোট্ট আমিকে খুঁজে পেয়েছি। আর পড়তে পড়তে আবিষ্কার করেছি মায়ের সঙ্গে সন্তানের আত্মিক সংযোগ। মিষ্টি মধুর কথোপকথনের মাধ্যমে সমগ্র কাব্যগ্রন্থে বিকশিত হয়েছে নিষ্পাপ এই সম্পর্ক। দেশ কাল, ধর্ম জাতি নির্বিশেষে এই সম্পর্ক আদি ও অকৃত্রিম। কি অনায়াসে, অবলীলায় তিনি আমায় তাঁর খোকা করে তুলেছেন। মায়ের প্রতি খোকার ভালোবাসাও কখন যেন বইয়ের পাতা থেকে আমার জীবনে উঠে এসেছে।
আজ মনে হয় 'শিশু' শুধুই কাব্যগ্রন্থ নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শিশু' আসলে মাতৃত্বের উদযাপন, মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের উদযাপন। যা যুগ যুগ ধরে স্বমহিমায় উদযাপিত হবে।
এই ওয়েবসাইটের কার্যকারিতার জন্য আমরা কুকি ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও ওয়েবসাইটের ট্রাফিক সঙ্ক্রান্ত তথ্যের জন্য আমরা কুকির সাহায্য নিই। নিচের বটন ক্লিকের মাধ্যমে আপনি সমস্ত রকমের কুকি ব্যবহারে সম্মতি জানাচ্ছেন।