অথ সুরধুনী কথনিকা : মহাপ্রভুর স্পর্শধন্য যে নদীটি

(0 পর্যালোচনা)
লিখেছেন/সম্পাদনা করেছেন
শান্তনু কুণ্ডু

মূল্য
₹460.00 ₹500.00 -8%
পরিমাণ
মোট দাম
শেয়ার করুন

অথ সুরধুনী কথনিকা : মহাপ্রভুর স্পর্শধন্য যে নদীটি 

শান্তনু কুণ্ডু 

প্রচ্ছদ-শিল্পী : ঋতদীপ রায় 

প্রথম প্রকাশ: এপ্রিল, ২০২৫

প্রাক কথন : 

'অথ সুরধুনী কথনিকা'। গানে ভোলানো সুরে দোলানো সময়ের এক বিচিত্রতম দলিল। 

একই সঙ্গে সত্যনির্ভর বিলম্বিত লয়ের মনমাতানো এক বনজ উপন্যাস। যা ঘেরা আছে সাবেক কালের ঐতিহাসিক ঘেরাটোপে। কৃষ্ণধাম তথা শান্তিপুরের চারদিকে মিঠে কুলের বন আর মটমটির জঙ্গল। তার ভেতর সেই আনন্দে উদ্বেল জলপ্রবাহ আজ প্রায় ইতিহাস। তবু এই নদীনাম আজও ধরে রেখেছে তথাকথিত কৃষ্ণধামের কথা-কাহিনিতে গুরুত্বপূর্ণ ধ্বজা। পুরাতন সেই সামাজিক-অর্থনৈতিক ও ধর্মভিত্তিক সমস্তরকম প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপটে আজ তার সেসব কিছু নেই। সেখানে ঘটে গেছে ব্যাপক রদবদল। লোকবিশ্বাস, কৃয়ধামের এই জলধারা আদতে আদিগঙ্গা। আর ভাগীরথী হল হরিনদী। একদিন যে খানে  ছিল মহাকবি কৃত্তিবাসের ভিটে। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা। বাংলায় রামায়ণ অনুবাদকের সমাধিতে মা গঙ্গা মিশে যাবার আগে ঘটে যাবে অনেক কিছু। সেইসব দেখা যাবে আদিগঙ্গার রোমাঞ্চকর জলপথের দুই কোলে। যার পূর্বপাড়ে রয়েছে সুতিকাটা, নারকোলডাঙা, বাগদেবীতলা, বাবলা আর নোয়াজানি। ডানদিকে ভালুকা অমুকতমুক ইত্যাদি আরও।

সুরধুনী জলকাব্যে ভোরবেলায় একদা গড়গড়াত মস্তবড় সোনার বরণ থালা। জোছনরাতে মায়া প্রহেলিকার ভেতর পাক খেত রুপোর চাকা। দিবারাত্রি বার-আষ্টেক হত তখন সাধনভজন। ঠিক সেইসময় শিউরে শিউরে কেঁপে উঠত দেবনদীর জলস্তর। অমাবস্যার কালো চাদরে ঝিকমিকিয়ে উঠত অজস্র হিরেমানিকের কুচো। নরমসরম ডাঙামাটির পটভূমিতে খাড়া থাকত মেঘভাসা শান্তিজল মাখানো সারসার জিওলগাছ। তল-জগতের কাদামাখানো জল সোড়ঙে জিওল মাছ। বনপুরের নিঝুম দুপুরে সহসা উদ্বেলিত হয়ে উঠত সুবাতাসের বেণুবাদন। গলার ভেতরবাগে আলাদারকম সুর গুছিয়ে বিলাপে কাতর হয়ে উঠত হারিয়ে যাওয়া নদীপথের খালি বুক।

পথ হারানো সুরধুনীর শূন্য বুকের হৃদয়পুরে এখন অনৈতিক বাঁশঝাড়। কোথাও শক্ত কাঠের বনভূম। কোথাও পাঁচমিশেলি শাকসব্জির খেত-বাগান। সেইসঙ্গে ধানবন আর বুনো কলার ঝোপঝাপ। অথচ সেখানে সুরধুনী জলকন্যের দিন কাটে নিরম্বু উপবাসে। সেই সঙ্গে হারিয়ে উধাও পাড়কোলে গুছিয়ে থাকা দেদার সবুজতা। মাটি ছেড়ে পলাতক বড় বড় ফল পাকুড়ের গাছ-গাছড়া। আমগাছের ভেতর এখন হাতে গোনা সিঁদুরটোকা, গোপালভোগ, কলাবতী, রানিভোগ, মিষ্টিভোগ। বিরল হতে লেগেছে কিষেণভোগ, মল্লিকা, সরিখাস আর কাঁচামিঠে। স্বাদে বর্ণে গন্ধে যারা অতি মনোহরা। এদের মিঠে পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ মহামান্য মোগল বাদশাহ আকবর। তিনি লাখো লাখো আমচারা বানিয়ে সাজিয়েছিলেন এই কৃষ্ণধাম। তার হাত ধরে এখানে একে একে মাটি থেকে মাথা তুলেছিল বাহাত্তরটি সুরম্য মসজিদ। তার পাশাপাশি অসংখ্য দেবালয়।

ভেঙে ঝরে গেছে যুগের তাণ্ডবে সব অট্টালিকা, মঠ আর মন্দির। লুটিয়ে পড়েছে হুড়মুড় করে রাশি রাশি বনেদি ইমারত। উধাও হয়ে গেছে দেবনদীর মেঘঘন জলকোলে থাকা আশ্চর্য সব পুরাতন বসত। চলে গেছে কিছু পাতালতলে। সেইসঙ্গে ছারখার হয়ে গেছে বহু যৌথ পরিবার। প্রণম্য সেই জলধারাটিকে শ্রদ্ধাভক্তি করবার মতো মানুষজন প্রায় অদৃশ্য। গুটিয়ে গেছে মাথার ওপরকার গাছপালাদের প্রসারিত সবুজ ছাতা। পাঠক অভাবে ধুলো হয়ে গেছে পাঠবাড়ির পুথিবদ্ধ গ্রন্থকথা। লুপ্ত হয়ে গেছে রাজপুথি ভাণ্ডারে থাকা বিরলতম স্মৃতিগ্রন্থ। বুকের ধন শুধু খুইয়ে গেল না বৃহৎবঙ্গের। হারিয়ে গেল মননের ঐতিহ্যসকল। ছলছলিয়ে ওঠা চোখের ভেতরকার নিবিড়তম যোগাযোগটাও উধাও। অথচ মাত্র বছর ষাটেক আগে যে প্রবাহধারা ছিল জল ঠাসা। আর মহাশিল্পীদের মতো যার ছিল হাজারো চোখ। অবশ্য লেখকের সেই চোখ না থাকায় এই উপন্যাসের কালের স্তর বিন্যাস অসম্পূর্ণ। সেইসঙ্গে তথ্য ত্রুটি মার্জনীয়। পাশাপাশি সংশোধনীয় বটে।


পর্যালোচনা ও রেটিং

0 মোট 5.0 -এ
(0 পর্যালোচনা)
এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি