হেমন্তময়

(0 পর্যালোচনা)
লিখেছেন/সম্পাদনা করেছেন
Bishwanath Kundu

মূল্য
₹100.00
পরিমাণ
মোট দাম
শেয়ার করুন

হেমন্তময় 

শ্রীবিশ্বনাথ কুণ্ডু 

কিছু কথা----

খুব ছোটোবেলা থেকেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান আমার ভালো লাগে। প্যান্ডেলের মাইকে তাঁর গান আমি প্রথম শুনি। একটা গান এখনও খুব মনে আছে, 'সুজন কাণ্ডারী, আমারে নিয়া দিবা সাত সাগরে পাড়ি'। তখন অবশ্য জানতাম না ওটা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। পুজোয় তিন-চারদিন মাইক বাজলে ওই গানটা ঘুরে ফিরে কয়েক বার বাজানো হতো। আমি যখন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন আমাদের বাড়িতে প্রথম রেডিও আসে। সালটা ১৯৭৭। রেডিওটা মায়ের আগ্রহে কেনা হয়। মা খুব অসুস্থ হয়ে কলকাতার এস. এস. কে. এম. হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন ওই হাসপাতালের হৃদয়-বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনোতোষ পাঁজা মহাশয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি হলো মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত জাড়া গ্রামে। অপারেশনের তিনদিন পরে মায়ের জ্ঞান ফিরেছিল। মা অনেকদিন হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় মা বলেছিলেন, 'বেঁচে যখন ফিরছি আমাকে একটা রেডিও কিনে দাও।' বাবা ওই সময় মেজর কোম্পানির একটি রেডিও কিনে দেন। দাম নিয়েছিল দেড়শো টাকা। সেই রেডিওতে আমরা অনেক শিল্পীর গান শুনতে পেতাম। তার মধ্যে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানও থাকতো। তাঁর গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীত, আধুনিক গান, ছায়াছবির গান শুনতে পেতাম।

আমাদের গ্রামের নিকটবর্তী মফস্সল শহর রামজীবনপুরে একটি সিনেমা হল ছিল। নাম গোষ্ঠটকিজ। সেখানে সিনেমা দেখা ছিল এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের অন্যতম বিনোদন। আমাদের পাড়ার এক কাকা (যাঁকে এ বই উৎসর্গ করেছি) ও গ্রামের দু'চারজন খেটে খাওয়া সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ সিনেমা দেখে সেখান থেকে ছোটো ছোটো বই কিনে আনতো। বইগুলিতে গানের কথা, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীর নাম থাকতো। তারা ওই বই দেখে সিনেমার গান হারমোনিয়ামে তুলতো ও গাইতো। বইগুলিতে স্বরলিপি থাকতো না। তারা সুর স্মৃতিতে ধরে রেখে গানগুলি হারমোনিয়ামে তুলতো। তারপর বইগুলি যত্ন করে রাখতো। আমি সেসব বই দেখার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে আমি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম পড়েছি। তখনই তাঁর নাম প্রথম জেনেছি।

তারা গাইতো 'ফুলেশ্বরী' ছবির গান, 'যেও না দাঁড়াও বন্ধু, আরো বলো কুকথা! হংসপাখায় পাঁক লাগে কি সরস্বতীর আসন যেথা।' কিংবা হারমোনিয়াম ছবির গান, 'মন বলে আমি মনের কথা জানি না' ইত্যাদি। তারা এসব গান প্রায়ই গাইতো। এসব গান শুনে খুব ভালো লাগতো। তখন থেকেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মায়। পরে রেডিওতে ও মাইকে তাঁর অসংখ্য গান শুনেছি ও আজো শুনছি। তাঁর গান আমার হৃদয় জয় করেছে। আমি বুঝতে পেরেছি শিল্পী হিসেবে তিনি সকলের থেকে আলাদা। তিনি যেন কাছে বসে গান গাইছেন। এমন সুন্দর, সহজ, সরল গান আর কারো কাছে পাইনি। তখন থেকেই সেই ভালো লাগা হৃদয়ে বহন করে নিয়ে চলেছি। আমাকে কেউ আমার একজন প্রিয় শিল্পীর নাম জিজ্ঞাসা করলে আমি সঙ্গে সঙ্গে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম বলি। যদি অনেক প্রিয় শিল্পীর নাম কেউ জানতে চায় তখন অনেকগুলি নাম আসে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে কাছ থেকে চোখে দেখা ও তাঁর গান শোনার বাসনা আমার মনে থাকলেও সে সৌভাগ্য আমার হয়নি। ১৯৮৯ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর রেডিওতে পরের দিন সে সংবাদ পেলাম। কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান ঘটেছে। আমি তখন কামারপুকুর কলেজে ইতিহাস অনার্সের ছাত্র। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বাড়ি ফিরেও মনটা ভালো নেই। রাত আটটায় রেডিওতে কলকাতা 'ক' প্রচার তরঙ্গে প্রচারিত হলো স্টুডিও রেকর্ডে গৃহীত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের শেষ গান, 'একটাই শুধু প্রশ্ন আমার, শ্মশানেতে কতো লোক হবে। এ গান হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশানুসারে তাঁর মৃত্যুর পর বাজানো হয়। গানটির গীতিকার লক্ষ্মীকান্ত রায়, সুরকার দীপেন মুখার্জী, গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। গানটির কথা আমি সঙ্গে সঙ্গে লিখে নিয়েছিলাম। মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে হলো, যে শিল্পী আমার হাদয়ে বাস করছেন তাঁকে নিয়ে একটা গান লিখি। প্রথমে একটা ও পরে দু'তিনটে গান লেখা হয়ে গেল। পরের দিন কলেজ গেলাম না। সেগুলোর সুর করলাম। কলেজে অনার্স ক্লাসের এক সহপাঠী গান গায় জানতে পেরেছিলাম। কলেজের ফাংশনে তাঁর গান শুনেছিলাম। তাকে গানগুলি পড়তে দিলাম। সে পড়ে প্রশংসা করলো, লিখতে উৎসাহ দিলো। তাকে সুরগুলি শোনালাম। এ ব্যাপারে সে আগ্রহ দেখায়নি।

তারপর অনেকদিন পরে পরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে অনেকগুলি গান লিখেছি। মনে এই বাসনা ছিল যে, গানে নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষকে নিয়ে গান হবে না কেন। তাঁকে নিয়ে কিছুদিন আগেও গান লিখেছি। জানিনা পরে আরো লিখবো কিনা। গানগুলি লেখার পরে পরেই সেগুলির সুর করার চেষ্টা করেছি।

খুব ইচ্ছে ছিল স্বরলিপিসহ গানগুলি প্রকাশ করার। কিন্তু নিজে স্বরলিপি করতে না পারায় খুব অসুবিধা হয়েছে। ........

বিনীত 

শ্রীবিশ্বনাথ কুণ্ডু 

পর্যালোচনা ও রেটিং

0 মোট 5.0 -এ
(0 পর্যালোচনা)
এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

সংশ্লিষ্ট বই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি