আদি পর্ব
কৌস্তভ ভট্টাচার্য
২৪০৩ খ্রিস্টাব্দ। শেষ বিশ্বযুদ্ধের পর তিনশো বছর কেটে গেছে। কিন্তু এক সময়ের সুন্দর নীলগ্রহটা বরাবরের মতো ক্ষতিগ্রস্ত। পৃথিবীর বেশিরভাগটাই এখন মানুষের অগম্য---- শেষ বিশ্বযুদ্ধে যথেচ্ছ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়তার হলাহলে অভিশপ্ত। এককালের দর্পিত মানবসভ্যতা এখন ম্রিয়মাণ। পৃথিবীর ক্রমহ্রাসমান শক্তিভাণ্ডার, ধর্মীয় বিভেদ আর পারস্পরিক অবিশ্বাস মানুষকে বেঁধে ফেলেছে ছোট ছোট গোষ্ঠীতে।
ডিস্টোপিয়ার পাঠকের কাছে এই ভবিষ্যতের ছবি নতুন কিছু নয়। সেই কবে অল্ডাস হাক্সলি থেকে জর্জ অরওয়েল, রে ব্র্যাডবেরি থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্র---- ডিস্টোপিয়ার দিকনির্দেশ এঁকেছিলেন এই ভাবে। তারপর থেকে অজস্রবার আমরা পৌঁছেছি post apocalyptic বা মহাপ্রলয় পরবর্তী চিরঅন্ধকারের এই ভাবীকালে যেখানে বিজ্ঞান মানুষকে গ্রহান্তরে পৌঁছে দেয়নি কিংবা বিকল্প শক্তির উৎসও এনে দেয়নি, বরং নিজের চিরকালীন স্বভাববশত যুযুধান এবং হিংস্র মানুষ বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে চলেছে ক্রমাগত।
কিন্তু কেমন হয় যদি এই ডিস্টোপিয়ার কেন্দ্রে থাকে একটা অতি চেনা শহর, যার গল্প ভারতবর্ষের প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুনে আসছে কত সহস্রাব্দ ধরে! ভারতের প্রায় প্রত্যেক শিশুর কানে সেই শহরটার গল্প পৌঁছে যায় কোনো না কোনোভাবে!
শহরটার নাম? হস্তিনাপুর।
'আদিপর্ব'--- মহাভারতের প্রথম পর্বের এই রকমই এক ডিস্টোপিয়ান পাঠ। শান্তনু থেকে সত্যবতী, পরাশর থেকে ভীষ্ম সব অতি চেনা চরিত্ররাই সেখানে উপস্থিত, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর এক অচেনা রূপকল্পে।
মহাকাব্য আর কল্পবিজ্ঞান---- সাহিত্যের দুই সমান্তরাল ধারা এখানে হাত ধরেছে একে অন্যের। মিলেমিশে কী দাঁড়িয়েছে তা বিচার করার অধিকার শুধু পাঠকের।