বাংলা পক্ষ : বাংলা ও বাঙালি বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন

(0 পর্যালোচনা)
লিখেছেন/সম্পাদনা করেছেন
প্রশান্ত সেন
প্রকাশক বইদেশিক

মূল্য
₹350.00
পরিমাণ
মোট দাম
শেয়ার করুন

বাংলা পক্ষ  : বাংলা ও বাঙালি বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন 

সংকলন : প্রশান্ত সেন 

(বাঙলা ও বাঙালী বিষয়ক পনেরোটি প্রবন্ধের সংকলন) 

" ১৯০৫ কি ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে জ্যোতিষচন্দ্র সরকার নামে আরেকজন বাঙালী ক্যামেরাম্যান ইতিহাসে প্রসিদ্ধ 'এ্যান্টি পার্টিশন ডে'র শোভাযাত্রার ছবি তুলেছিলেন। এই শোভাযাত্রার সম্মুখে চলেছিলেন স্বর্গতঃ স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। এই শোভাযাত্রার ছবি ধর্মতলায় কোরিস্থিয়ান থিয়েটারে দেখান হত। জ্যোতিষবাবু ম্যাডান কোম্পানীতে চাকরি করতেন, পরে ম্যাডান কোম্পানী ছেড়ে দিয়ে এক বাঙালীর কোম্পানীতে যোগদান করেছিলেন।

একটা প্রশ্ন আমার মনে স্বতঃই উদয় হয়। প্রশ্নটা এই যে, বাংলাদেশের লোকের মধ্যে যখন সিনেমা বোধ ধীরে ধীরে জাগ্রত হচ্ছিল, তখন ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশের লোকেরা কি করছিল? এই সম্পর্কে বিশেষ করে আগে বোম্বাই প্রদেশের কথা মনে পড়ে। বোম্বাই শহর, কোলাপুরি, পুনা প্রভৃতি বোম্বাই প্রদেশের অন্যান্য জায়গা বহু দিন থেকেই ভারতবর্ষের সিনেমা শিল্পটির একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে আছে। বোম্বাই-এর লোকেরা বাঙলাদেশের লোকেদের চেয়েও ধনী, তাদের ব্যবসায় বুদ্ধি বেশী এবং কাজ করবার ক্ষমতাও অধিক। তারা কি এই সময়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসেছিল? কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ সময়কার বোম্বাই-এর কোনো খবরই আমরা চেষ্টা করেও জানতে পারি না।


এ সম্পর্কে যতদূর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তাতে জানা যায় যে, ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ বোম্বাই-এর একটি ভদ্রলোক চলচ্চিত্র তৈরী করবার বাসনায় একটি ক্যামেরা কিনেছিলেন। কিন্তু মূলধনের অভাবেই হোক, অথবা অন্য কোনো কারণেই হোক কোনো চলচ্চিত্র তৈরী করা সে ভদ্রলোকের দ্বারা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তিনি স্থানীয় তিনজন আর্টিষ্টকে বাধ্য হয়ে ক্যামেরাটি বিক্রী করে দিলেন। এই আর্টিষ্টদের নাম হচ্ছে এ. পি. কারণ্ডিকার, এস এন পাটনাকার এবং ভিপি দিবেকার। মূল্য হিসাবে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র আট শত মুদ্রা। ক্যামেরাটি তখনকার দিনের পক্ষেও অতি পুরাতন মডেলের ছিল এবং দু'দশ ফিটের বেশী ফিল্ম তাতে ভরবার উপায় ছিল না। এই ক্যামেরা নিয়ে তিন বন্ধু মিলে চলচ্চিত্র তৈরী করার কাজে লেগে গেলেন এবং অনেক উত্থান ও পতনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হতে হতে ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে তাঁরা 'সাবিত্রী' নামে একটি চিত্র তৈরী করলেন। ছবিখানি হয়েছিল অতি রাবিশ এবং ব্যবসার দিক দিয়েও তাঁরা লোকসান খেয়েছিলেন। ভবিষ্যতে পাটনকার ফ্রেন্ডস এগু কোম্পানী নাম দিয়ে একটি কোম্পানী অনেকগুলি ছবি তৈরী করেছিল। তাদের সঙ্গে এই বন্ধুত্রয়ের কোন যোগ ছিল কি-না বলতে পারি না।

বর্তমান শতাব্দীর প্রথম যুগে জে. এফ. মদন নামে এক পাশী ভদ্রলোক কলকাতা শহরে মদ ও অন্যান্য Provisions এর ব্যবসা করতেন। ইনি মিলিটারী ও অন্যান্য জায়গায় মাল সরবরাহ করে প্রভূত পয়সা উপার্জন করতেন। মদনসাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এই সিনেমা শিল্প। তিনি প্রথমে পরীক্ষা হিসেবে ভারতবর্ষময় Touring Company পাঠাতে আরম্ভ করলেন। কলকাতা শহরেও কখনো গড়ের মাঠে তাঁবু ফেলে কখনো বা Bandman Company-র Empire থিয়েটারে-বর্তমানে কপূর চাঁদের যেখানে Roxy থিয়েটার-ছবি দেখাতে আরম্ভ করলেন। সে সময়ে তাঁদের ব্যবসা শুধু কলকাতা শহরে নয়, সমস্ত ভারতবর্ষব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এর পরেই মদনসাহেব কলকাতার প্রথম সিনেমা হাউস

তৈরী করলেন-Central Municpal আপিস ও হগসাহেবের বাজারের মধ্যবর্তী জমিতে। এই সিনেমা হাউসের নাম হল-Elphinstone Picture Palace-

যেটা এখন Minerva Cinema House হয়েছে।

কয়েক বছরের মধ্যেই জে. এফ. ম্যাডান কোম্পানী ভারতবর্ষের সমস্ত প্রধান শহরে নিজেদের সিনেমা হাউস তৈরী করে ফেললেন। একসময় ম্যাডান কোম্পানী প্রায় একশো সিনেমা হাউসের মালিক ছিলেন। এছাড়াও তাঁরা অন্যের হাউসও ভাড়া নিয়ে রেখেছিলেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর পৃথিবীর আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা হলেই ম্যাডান কোম্পানী চলচ্চিত্র করবার দিকে মন দিলেন এবং তাঁদের এই প্রতিষ্ঠানটিকে লিমিটেড করে নাম দিলেন ম্যাডান থিয়েটার্স লিমিটেড। ম্যাডান থিয়েটার্স লিমিটেডের প্রথম ছবির নাম 'বিশ্বমঙ্গল'। এই ছবি ৮ই নভেম্বর, ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতা শহরের কর্ণওয়ালিশ থিয়েটারে প্রথম দেখানো হয়। এই ম্যাডান থিয়েটার্স লিমিটেডই বাঙলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র তৈরী করবার ষ্টুডিও খোলে টালীগঞ্জে, এখন সে ষ্টুডিওর নাম হয়েছে ইন্দ্রপুরী ষ্টুডিও। জে. এফ. মদনই প্রকৃতপক্ষে বাঙলাদেশের চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের প্রথম exhibitor, প্রথম distributor এবং প্রথম producer মদনসাহেবের মৃত্যুদিন অবধি এদেশে তাঁর প্রতিষ্ঠানই প্রমুখ প্রতিষ্ঠান বলে বিবেচিত হত।

মদনসাহেব নিজে অতি সৎলোক ছিলেন এবং দেশের প্রায় প্রত্যেক সৎকার্য্যেই তিনি দান করতেন। অত বড় কোম্পানীর মালিক এবং প্রভূত ধনের অধীশ্বর হয়েও তিনি ছিলেন নিরভিমানী। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারত। এমনকি স্কুলের ছেলেরাও সদলবলে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে মোটা রকমের চাঁদা নিয়ে যেত। একথা আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

মদনসাহেবের মৃত্যুর সময় তাঁর বিরাট ব্যবসায়ের উপযুক্ত কর্ণধার রেখে গিয়েছিলেন। এঁর নাম হচ্ছে রুস্তমজী ধোতিওয়ালা। রুস্তমজীর কথা কলকাতায় তো বটেই, এমনকি ভারতবর্ষময় প্রবাদের মত বিদিত আছে। তাঁর আমলে ম্যাডান থিয়েটার্স লিমিটেড উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিল। শোনা যায়, রুস্তমজী নাকি মদন সাহেবের CorinthianTheatre এ চাকরী নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন। পরে তাঁর কর্মদক্ষতা ও তৎপরতা দেখে মদনসাহেব তাঁকে অন্য ব্যবসায়ের মধ্যে ঢুকিয়ে নেন। রুস্তমজী পরে জে. এফ. ম্যাডানের এক কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন।"

- সেকালের বাংলা সিনেমা, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

পর্যালোচনা ও রেটিং

0 মোট 5.0 -এ
(0 পর্যালোচনা)
এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি