নবীন সন্ন্যাসীর গুপ্তকথা
পঞ্চানন রায়চৌধুরী
মোহনলাল বক্সী জাতিতে মুসলমান, তাহার প্রকৃত নাম রহিমবক্স, ঢাকায় তার বাড়ী, ডাকাতি মামলায় ধরা পড়ে, তার পর জেল ভেঙে পালিয়ে এই মুরশিদাবাদে বাস কচ্ছিল। বেটা বাংলা কথা ক'য়ে বাঙ্গালীদের সঙ্গে ঠিক মিশতে পার্ব্বে না বোলে, হিন্দুস্থানী ঢঙ রেখেছিলো। ওঃ কি ভয়ানক কথা! বেটা কত হিন্দুর জাত মেরেছে। আমিই তো বলরাম ঠাকুরের আখড়ায় এই ফুলমণির আনীত বাতাসা ও জল গ্রহণ করিয়াছিলাম, বেটা একজন পাকা প্রেমাত্মা খেলোয়াড় ব'লে; হরকিশোর বাবু জেনে শুনে দলে নিয়েছিলো, হরকিশোর বাবুর বাড়ী জোয়াখেলার একটা আড্ডা ছিল। সেইখানে বড় মানুষের ছেলেদের ভুলিয়ে এনে যে রকমে হোক সঙ্গে যা থাকতো, সব কেড়ে নিতো, বক্সী বেটা সেই কাজের দালাল ছিল। হতভাগ্য মনোহরকে এই বেটাই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে খেলতে হবে ব'লে ডেকে আনে, তার পর যা যা ঘটেছিল, তাতো আমি স্বচক্ষেই দেখিয়াছিলাম। ফুলমণিকে বেটা দেশ থেকে নিয়ে আসে, কারণ তখন তার হাতে তিন চার হাজার টাকা ছিল; তার পর সর্বস্ব নিয়ে এখন ফেলে পিণ্ডারি নামক বিখ্যাত দস্যুদলে মিশিয়াছে। হরকিশোরের বাড়ী যে বেটা খুন হয়েছিল, সেই আজিমোল্লা ফুলমণির সম্পর্কে ভাই হ'তো, কাজেই বক্সী তার মুরুব্বি হ'য়েছিল। সর্বদা খুব গোপনে সাহায্য করিত; কিন্তু প্রকাশ্যে কেহ কাহারও পরিচিত বলিয়া বোধ হইত না। পাপাত্মা নিজে যেমন মোহনলাল বক্সী নাম গ্রহণ করিয়াছিল, তেমনি উলফুত বিবির নাম ফুলমণি রাখিয়াছিল।
...যে সময় সিরাজউদ্দৌলা বাঙ্গালার সুবেদার, সেই সময় আমার গুরুদেব মীরকাসিমের ভাগ্য গণনা করিয়া বলেন যে, চারি বৎসরের মধ্যে বাঙ্গালার রাজসিংহাসনে তুমি উপবিষ্ট হইবে। মীরকাসিমের সিংহাসন প্রাপ্তির কোন সম্ভাবনা ছিল না; সেইজন্য তখন সে কথা তাঁহার বিশ্বাস হয় নাই। তার পর ঘটনা স্রোতে সেই অঘটন ঘটিলে পর, আমার গুরুদেবের উপর নবাব বাহাদুরের অচলা ভক্তি হয়; হিন্দুদের জ্যোতিষ সত্য বলিয়া বিশ্বাস করেন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি