কলের শহর কলকাতা
সিদ্ধার্থ ঘোষ
কলকাতার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে কলের শহরের নানা প্রাচীন নিদর্শন। গ্যাসের আলো, ঢালাই লোহার কারুকার্য, দমকল ডাকার বাক্স, লাল ইটের চৌকো বা ছ’কোণা বাহারি চিমনি বা ফোর্ট উইলিয়ামে বল-টাওয়ার ইত্যাদি। কলকাতার তিন-শ বছর স্মরণ-সূত্রে ইংরেজ সভ্যতার এ-দেশে শিকড় গাড়ার অনেক কাহিনী শুনেছি আমরা কিন্তু জানা যায়নি ইংলন্ডের শিল্পবিপ্লবের রেশ ধরে কী ভাবে সাড়া দিয়েছিলাম আমরা। অথচ কলকাতাকে স্বচ্ছন্দে আমরা ভারতের প্রথম ‘কলের শহর’ বলতে পারি। হাওয়া কল, বাষ্পের কল, টরে-টক্কা কল, কলের নৌকা, গানের কল, ছবি-তোলা কল, লেখার কল কি গোনার কল—আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার বহু ফসলেরই অভিষেক কিংবা প্রবর্তন অথবা অভিযোজন ঘটেছে এখানে। কিন্তু সে কি শুধুই কর্তার ইচ্ছায় বহিরাগত প্রযুক্তিবিদদের কর্মের ফল? কলকাতার কারিগরদের গৌরবময় ইতিহাস সংগৃহীত হয়নি বলেই আমাদের অকারণ হীনম্মন্যতা। এই প্রথম ধরা পড়ল, উইলিয়ম কেরীর আমলের প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার গোলোকচন্দ্র, প্রথম ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার শিবচন্দ্র, ইন্সট্রুমেন্ট মেকার মহসীন, দেশীল কোম্পানি কি ‘স্বদেশী’ মোটরগাড়ি নির্মাতা বিপিনবিহারী প্রমুখের আশ্চর্য উপাখ্যান। জানা গেল, উনিশ শতকের কলকাতার হিন্দু-মুসলিম স্কাই-লাইন-নিমার্তা স্থপতি নীলমণি মিত্রের কীর্তির কথা। গল্প-কবিতা-গান থেকে ইতিহাসের বিবর্ণ দলিল, কালীঘাটের পট থেকে স্টিল বা উড-এনগ্রেভিং এবং দুর্লভ ফোটোগ্রাফ ও ফ্যাকসিমিলির সমাহারে ‘কলের শহর কলকাতা’ একটি কালেক্টর্স আইটেম।সিদ্ধার্থ ঘোষের লেখার সব থেকে বড় গুণ, একই সঙ্গে গবেষকের নিষ্ঠা ও রম্যভঙ্গির লেখকের প্রসাদগুণ মিলেমিশে থাকে তাঁর আলোচনায়। ‘কলের শহর কলকাতা’ গ্রন্থেও তাঁর এই অনন্যতা খুঁজে পাবেন পাঠক।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.