ওরা অপরাজিতা
শাওন
পাকিস্তানি অফিসারের ঘরে ওর যখন ডাক পড়ল, ও তখনও ভাবছে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝি ছেড়ে দেওয়া হবে। ও জানতো না গণধর্ষিতা শব্দটা সারাজীবনের মতো ওর নামের পাশে জায়গা করে নেবে।
উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি অষ্টাদশী মুরাদ জানতো না জঙ্গিদের কেমন দেখতে হয়। মাসুলে ওদের যৌনদাসী হওয়ার পর জানতে পারে বনের হিংস্র প্রাণীও ওদের দেখে লজ্জা পাবে।
ডাইনি অপবাদে চিহ্নিত দুর্গা নিজের ভাগ্য নিজে জয় করে নিষেধের কাঁটাতারের এপারে স্বতন্ত্র, নিজেতে নিজে একাত্ব।
এগারো বছরের মেঘার জন্য বাড়ির দরজা বন্ধ তাই অসীমের মাঝে নিজের আকাশ রচনা করে সে।
গণবিবাহ যখন প্রহসনে পরিণত হয় তখন তার পরিণতিতে সমাজের তথাকথিত পদস্খলনেই নিজের ভাগ্যের মুক্তির উপায়।
আবার পাশের বাড়ির মেয়েটি বিবাহিত অথচ অক্ষতযোনি।
প্রচলিত ধারণায় মেয়েদের একমাত্র নিরাপত্তা বিবাহ নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানটির চোখে চোখ রেখে মানুষের কথা বলে সেই চোর মেয়েটিও।
নিজেকে ভালোবাসার ভালোথাকার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত যে নারী সেই তো শক্তিরূপেন রূপে সমাজকে পাপমুক্ত করে ঐন্দ্রি রূপে আর্বিভূতা হন।
আসলে সমাজ নামক অভিভাবকটি নারীদের মাথার ওপর যুগে যুগে একটি পুরুষ-ছাতা ধরে রেখেছে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে নিরাপত্তার অছিলার আড়ালে নাভিশ্বাস উঠে আসা বালিকাটি, মেয়েটি, রমণীটি সফল ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে না। মা-বোন-মেয়ের তকমার পেছনে সে শুধুই যৌনবস্তু। করুণার পাত্র। পৃথিবীর এক পিছিয়ে পড়া জীব। সেখান থেকে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে এসে পিঠটান করে হাঁটতে চাইলে সে হবে নিয়ম না মানা বেয়াদব। সমাজের এই একঘেয়ে একপেশে মুখস্ত নিয়মের শেষ কোথায়? সমাজ-সংসারের সামনে এবার বলার সময় হয়েছে- "মেয়ে তুই নিজেকে নিয়ে উল্লাস কর।"
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি