পশ্চাৎপট
বনফুল
চতুর্থ বাণীশিল্প সংস্করণ : জানুয়ারি ২০২৩
প্রচ্ছদ : প্রণবেশ মাইতি
যাহা নাই তাহার কথা লিখিতে বসিয়াছি। অনেকে আমাকে অনুরোধ করিয়াছেন, আমি যেন এইবার আমার জীবনচরিত লিখি। লিখিতে বসিয়া কিন্তু প্রথমেই একটি সমস্যার সম্মুখীন হইয়াছি। আমার জীবনচরিতে 'আমার' কতটুকু? আমি তো আমার পিতামাতার সৃষ্ট জীব। তাঁহারাই আমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, লালন-পালন করিয়াছেন, লেখাপড়া শিখাইয়াছেন, মেডিকেল কলেজে পড়াইয়া ডাক্তার করিয়া দিয়াছেন এবং বিবাহ দিয়া আমাকে আমার জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে যুক্ত করিয়া সংসারে স্থাপন করিয়াছেন। এ-সবের মধ্যে 'আমার' কৃতিত্ব কতটুকু? আমার প্রতিভা? আমার প্রতিভা যদি কিছু থাকিয়াই থাকে (যদি বলিতেছি এই জন্য যে, অনেক সমালোচক আমার মধ্যে প্রতিভার লক্ষণ দেখিতে পান না), তাহা হইলে সে-প্রতিভার জন্যও আমি এমন একটা অদৃশ্য শক্তির কাছে ঋণী যাহার দিব্য প্রভাবের বর্ণনা আমার সাধ্যাতীত হইলেও তাহার অস্তিত্বের নিকট আমাকে ঋণ স্বীকার করিতেই হইবে। সুতরাং আমার জীবনচরিত লিখিতে গিয়া দেখিতেছি আমার জীবনচরিতে 'আমার' বলিয়া আস্ফালন করিবার মতো কিছুই নাই। আমি সংসারের আবর্তে পড়িয়া 'আঁকুপাঁকু' করিয়াছি মাত্র। তাহার ইতিহাসই হয়তো আমার জীবনচরিত। আমার এই 'আঁকুপাঁকু করার ইতিহাসও আমার অনেক গল্প-কাহিনীতে বিবৃত হইয়া আছে। তাহা ছাড়া সব কথা এখন মনেও নাই। আগামী ৪ঠা শ্রাবণ, ১৩৮৪ সালে আমি আটাত্তর বৎসরে পা দিব। এতদিনের সব স্মৃতি মনে থাকা সম্ভব নয়। যেটুকু মনে আছে তাহাই লিপিবদ্ধ করিব। সন-তারিখও খুব সম্ভব নির্ভুল হইবে না। তাহা ছাড়া আমার জীবন সম্বন্ধে কেহ কেহ কিছু কিছু লিখিয়াছেন ইতিপূর্বে, সুতরাং সে-সবের পুনরুক্তি হওয়াও সম্ভব। পাঠক-পাঠিকাদের এই সব কথা স্মরণ রাখিতে অনুরোধ করিয়া আমি এইবার শুরু হইতে আমার জীবনকাহিনী আরম্ভ করি।...
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি