অগ্নিযুগ প্রসঙ্গ এবং রবীন্দ্র হত্যা ষড়যন্ত্র
পিনাকী বিশ্বাস
প্রচ্ছদ : শ্রীময় দাস
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের অনেকগুলো নাম আছে। মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক রজনীপাম দত্ত বলে গেছেন, "ইহা হইল রক্ষণশীল ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভ্যুত্থান", মানে মামুলি সিপাই বিদ্রোহ। পরবর্তীতে রুদ্রাংশু মুখার্জীর মতো ঐতিহাসিক, যিনি অনেক তথ্যানুসন্ধান করে জানতে পারেন মঙ্গল পাণ্ডে, বিদ্রোহী-ফিদ্রোহী নন, স্রেফ ভাঙখোর নেশাড়ু ছিলেন, তিনিও একথার সমর্থন করেন। ওদিকে মহামতি মার্ক্স আর মহামতি সাভারকর এই একটা জায়গায় অন্তত ঝগড়া করেননি। মোটামুটি এক লাইনে মিলিয়েছেন। ভারতের জাতীয় মহাবিদ্রোহ শুধু দেশীয় সিপাই আর প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষয়িষ্ণু রাজন্যবর্গের বিদ্রোহ না সাধারণ মানুষের সংগ্রাম সে নিয়ে গবেষকদের তর্ক কখনো মেটেনি, মিটবে না। মোটামুটিভাবে এটুকু ব্যাপারে সকলে একমত যে, এটি ছিল ১৮ শতকে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ গণ-অভ্যুত্থান, যা কোম্পানির একচ্ছত্র শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
সিপাহি বিদ্রোহ বা জাতীয় মহাবিদ্রোহ বললে এক নিশ্বাসে তিনজনের নাম মাথায় চলে আসে; ঝাঁসির রানি, নানা সাহেব ও তাঁতিয়া তোপি। এদের মধ্যে শেষোক্ত ব্যক্তি কোনো রাজা-গজা ছিলেন না। ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রণকুশলী সেনাপতি। পরাধীন ভারতের গেরিলা যুদ্ধের সার্থক প্রয়োগকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী যোদ্ধা। অত্যুক্তি নয়। 'আঘাত করো ও পলায়ন করো' যুদ্ধকলাকে লড়াইয়ের ময়দানে কী করে প্রয়োগ করতে হয়, ঝটিকা আক্রমণে অধিকতর ক্ষমতাবান সেনাদলকে নাকানিচুবানি খাইয়ে দিশেহারা করতে হয় তার অজস্র উদাহরণ রেখে গেছেন তিনি। প্রখর উপস্থিতবুদ্ধি, ছদ্মবেশ নেওয়ার ক্ষমতা, শত্রুকে দিগ্ভ্রান্ত করা, ধোঁকা দেওয়া ছিল জলভাত। ধরা পড়েছিলেন বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই, নাহলে কোম্পানি বিদ্রোহ মেরে গুটিয়ে দিলেও একা তাঁতিয়াকে ধরতে ছড়িয়ে ছয়লাপ করে ফেলেছিল।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি