অনির্বাণ সেই অগ্নিশিখা
মুক্ত চিন্তার অনন্য দলিল
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : বুলবুল আহমেদ
নবজাগরণের প্রধানতম শর্ত হল মানবতাবাদ। তার আয়ােজনের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ ও মানুষের অন্তহীন জিজ্ঞাসা। জীবন ও জগতের সমস্ত কিছু যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে গ্রহণ করা। কোনও মতবাদের প্রতিই প্রশ্নহীন আনুগত্য না দেখান—এই দর্শনে অট ল আস্থা রাখা আমাদের প্রাণের কবি চণ্ডীদাস বলেছেন— সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই'। নজরুলও লিখেছেন— ‘মানুষেরে ঘৃণা করি, ও কারা কোরান-বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি। রবীন্দ্রনাথও অসংখ্যবার আমাদের ধর্ম-কারার প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন। তবে এই আদর্শে ইউরােপের মানুষ যেভাবে সামিল হয়েছে তেমনটা ঘটেনি আমাদের দেশে ও সমাজে। ধর্মের ডাকেই এখানে মানুষ মিলেছে, আজও মেলে। এবং সব ধর্মই চায় কেবল আনুগত্য ও বিশ্বাসের নিঃসীম অন্ধতা। প্রশ্ন করলে ও কার্য-কারণ-সম্পর্ক জানতে আগ্রহী হলে তার পরিণতি কি হতে পারে বা হয়, সে ইতিহাস বিষয়ে আমাদের ধারণা রয়েছে। অথচ সময় ও সমাজ থেমে থাকতে পারে না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে তার ক্রমাগ্রগমন ঘটে। উনিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলার যে রেণেসাঁ বা নবজাগরণের কথা বলা হয় তাতে অংশ নিয়েছিল হিন্দুসমাজেরস ইংরেজি শিক্ষিত একটি শ্রেণি এবং তা ছিল সীমাবদ্ধ ও ক্ষুদ্র। তার বাইরে রয়ে গেছে বিশাল রক্ষণশীল সাধারণ হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় তারা ছিল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার দিক দিয়ে যার পর নাই পশ্চাদপদ। সামগ্রিকভাবে বাঙালি মুসলমান সমাজ শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে প্রায় একশাে বছর পিছিয়ে পড়ে। তারা আধুনিক শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা বােধ করে বিশ শতকের গােড়ার দিকে এসে। বাংলার কৃষিনির্ভর মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা শােচনীয় থাকার কারণে ব্যয়বহুল উচ্চশিক্ষার দরজা তাদের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। এর পেছনে ঐতিহাসিক কারণও একটা ছিল, আর ছিল গোঁড়া মােল্লাতন্ত্রের চোখ রাঙানি। বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতি-বাণিজ্য ছিল কলকাতা কেন্দ্রিক ও একমুখিন। এইসব বিবিধ কারণে পর্যাপ্ত মেধা ও আকাঙ্ক্ষা থাকলেও উচ্চশিক্ষা অনেকের পক্ষেই গ্রহণ করা সম্ভব হত। সীমিত পরিসরে তার সূচনা হয় ১৯২১ সালে, অনেক বাধা পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ঢাকার মফস্বলী গ্ল্যানিমা কেটে গেল এক ঝটকায় এবং কলকাতা-ঢাকার মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি সেতু রচিত হল। কিছু পর প্রকাশিত হল
শিখা-র প্রথম সংখ্যা l শিখা-র উদ্দেশ্য বর্তমান মুসলমান সমাজের জীবন ও চিন্তাধারার গতির পরিবর্তন সাধন’। সংগঠনের মূল কর্মযােগী আবুল হুসেনের ভাষায় তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ‘চিন্তার চর্চা করা। আর তাদের স্লোগান ছিল : ‘বুদ্ধির মুক্তি'। এই সংগঠনের কর্মপ্রয়াসকে কেউ কেউ সংগত কারণে 'বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন' বলে পরিচিত করেছেন। তারা উপলব্ধি করেন মুসলমান সমাজের উন্নতির জন্য মুক্ত চিন্তাচর্চার প্রয়ােজন। এবং সেটা করা প্রয়ােজন সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে l
গ্রন্থটি শিখা পত্রিকার নির্বাচিত সংকলন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.