আরও ফটকেমি

(0 পর্যালোচনা)

লিখেছেন:
আরিফ আহমেদ
প্রকাশক:
সৃষ্টিসুখ

দাম:
₹149.00

পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

আরও ফটকেমি

আরিফ আহমেদ

প্রচ্ছদশিল্পী - সপ্তর্ষি দে

রথের পরদিন হোস্টেলের মাঠে সকল ছাত্ররা খেলিতেছিল — বড় গোলযোগ। কোনও কিছুতে মন দেওয়া দায়। মৌলবি সাহেব দু’বার আসিয়া ধমকাইয়াছেন, তাঁহার নামাজে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিতেছে বলিয়া। পণ্ডিতমশাই বলিয়াছেন যেন এইসব গোলযোগ সন্ধ্যারতির পূর্বে থামিয়া যায়, নতুবা তিনি ব্যবস্থা নিবেন। এই গোলযোগের মাঝে ফটিক গণেশকে লইয়া যখন পণ্ডিতমশাই সমীপে আসিয়া একখানি কাপড় চাহিল, পণ্ডিতমশাই অবাক হইয়া বলিলেন, “কাপড়ে কী করবি?” ফটিক বলিল, “পূজা করিব মাস্টারমশাই।” পণ্ডিতমশাই বিস্মিত হইলেন। তবে একখানি ধুতি দিয়া বলিলেন, “আমার পূজার কাপড়, নোংরা করিস না কিন্তু।” মনে ভাবিলেন, যদি পূজা-পূজা খেলাতে এই গোলযোগ কিঞ্চিৎ কমে, মন্দ কী। মৌলবি সাহেবও একই আশাতে তাঁহার নামাজের আসনখানি দিলেন। একই কথা বলিলেন, “নোংরা করিস না কিন্তু।”

অন্য মাস্টারমশাইদের এবং ছাত্রদের কাছে ফটিক আর গণেশ গিয়া বিবিধ সামগ্রী একত্র করিল, খাবার সামগ্রী ব্যতীত আর সকল কিছু ফেরত দিতে হইবে। তা অনেক কিছু জোগাড় হইয়াছে — বাতাসা, নকুলদানা, আধখানা আপেল, খানতিনেক পেয়ারা। মালীকে বুঝাইয়া কিছু ফুলেরও জোগাড় হইয়াছে। ছাত্রদের কোলাহল যখন হঠাৎ করিয়া থামিয়া গেল, তখন সকল মাস্টারমশাইরা ভাবিলেন, যাক তাঁহাদের অনুমান সঠিক। তাঁহারা ভাবিতেও পারেন নাই কী অপেক্ষা করিয়া আছে দৈবে। যখন বুঝিলেন, তখন সকলে স্বীয় কর্ম ছাড়িয়া দৌড়াইলেন মাঠের অভিমুখে কী হইয়াছে বুঝিবার নিমিত্ত। এমন কী হইতে পারে পূজাতে যে, সকল ছাত্ররা একযোগে চিৎকার করিয়া উঠিবে! সে কোলাহলের এত তীব্রতা যে, তাহাতে আরও গোলযোগ করা অসম্ভব। মাস্টারমশাইরা বাহিরে আসিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাঁহাদের হতভম্ব ভাব কাহারও নিকট লুকাইয়া থাকিল না। স্কুলের জলের বালতি বা চালের বস্তা জাতীয় ভারী সামগ্রী টানিবার নিমিত্ত যে চাকাওয়ালা কাঠের পাটাতন আছে, সেই পাটাতনখানিকে সুন্দরভাবে সাজানো হইয়াছে। তাহার চতুর্দিক মুড়িয়া দেওয়া হইয়াছে রঙিন কাগজ দিয়া, তাহার উপর পাতা হইয়াছে মৌলবি সাহেবের নামাজের আসন। আর তাহার উপর পণ্ডিতমশাইয়ের পূজার ধুতি পরিয়া বসিয়া আছে রামা মেথরের তিন বছরের পুত্র ডাকুয়া। 

রামা মেথর হোস্টেলের একপ্রান্তে থাকে, আর ডাকুয়া স্কুলের সকলের পরিচিত। ডাকুয়া কী একখানি রোগে আক্রান্ত হইয়া আপন হাত-পা চালাইতে পারে না — তাহাকে কেহ কখনও হাসিতে দ্যাখে নাই। সকল সময় নাক ফুলাইয়া কাঁদিতে থাকে। আপন হাতে খাইতে পারে না বলিয়া কেহ তাহাকে কিছু খাইতেও দেয় না। দিতে হইলে রামাকে দিয়া দেয়, সে খাওয়াইয়া দেয়। সেই ডাকুয়া বসিয়া আছে পাটাতনের উপর, তাহাতে লাগানো একখানি দড়ি ধরিয়া ছাত্ররা শোরগোল করিয়া টানিতেছে আর মাঝে মাঝে ধ্বনি উঠিতেছে — “জয় জগন্নাথ।” ছাত্ররা রথযাত্রা খেলিতেছে। আর সেই রথে আসীন ডাকুয়া একগাল হাসিয়া বসিয়া আছে, আর সকলে আসিয়া তাহাকে এটা-সেটা খাওয়াইয়া দিতেছে আর তীব্র স্বরে বলিতেছে — “জয় জগন্নাথ।” শোর করিয়া ছাত্ররা রথ টানিতেছে। গড় গড় করিয়া সেই রথ ঘুরিতেছে মাঠময়। যে সকল স্থানে ডাকুয়া কখনও যাইতে পারে নাই, আজ রথের উপর বসিয়া সেই সকল স্থান সে ঘুরিতেছে। যাহারা তাহাকে কখনও স্পর্শ করে নাই, তাহারা আসিয়া খাবার খাওয়াইতেছে — ডাকুয়া অনর্গল হাসিতেছে। 

পণ্ডিতমশাই আর অন্যান্য মাস্টারমশাইদের দেখিয়া ছাত্ররা থামিয়া গেল, কেবল ফটিক দেখে নাই। সে রথ টানিয়া বেড়াইতে থাকিল মাঠময়। পণ্ডিতমশাই একবার অস্ফুটে বলিলেন, “আমার ধুতি।” হোস্টেলের সুপার পণ্ডিতমশাইয়ের চেহারা দেখিয়া তাড়াতাড়ি বলিলেন, “ভাবিবেন না, আমি এখনই থামাইতেছি আর আপনার ধুতি ধোপাবাড়ি পাঠাইতেছি। আপনার নামাজের আসনও আনিতেছি মৌলবি সাহেব।” তিনি বারান্দা হইতে নামিতে যাইবেন, কিন্তু পণ্ডিতমশাই তাঁহার হাত ধরিলেন। বলিলেন “সুপারমশাই, আমি সারাজীবন পূজা করিয়া যাহাকে পাইলাম না, ওই একরত্তি হতভাগা কেমন করিয়া জানিল তিনি কোথায় থাকেন?” মৌলবি সাহেব আপন মনে বিড় বিড় করিতেছিলেন। “তোমাকে খুশি রাখিবার চেষ্টাতে কোনও ফাঁকি দিই নাই, কিন্তু এতদিনে জানিলাম তুমি খুশি হও কীসে।”

ছাত্ররা আবার সাহস পাইয়া রথ টানা শুরু করিল ফটিকের পিছু পিছু। সেদিন ফটিককে কেহ তিরস্কার করে নাই। 

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat™   |   © All rights reserved 2024.