বহতা সময়ের একলা পথিক অনিতা অগ্নিহোত্রী
ড. শম্পা ভট্টাচাৰ্য্য (বসু)
অনিতা অগ্নিহোত্রী তাঁর 'দেশের ভেতর দেশ' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন- "ইস্পাতের যোনি নিয়ে জন্মাব এবার, লোহার পাতে মোড়া শরীর নিয়ে। আমার আলিঙ্গনের চাপে চুরমার হয়ে যাবে হিংসক”। এই যাঁর উচ্চারণবাণী, নিঃসন্দেহে বলা যায় তিনি একজন সমাজবীক্ষক। সমকালীন সময়ে নারীকে লাঞ্ছিত হতে দেখে তিনি যেমন অগ্নিবাণী নিক্ষেপ করেন, তিনিই আবার কবিতায় লেখেন- "একলা পায়ে বিশ্বভুবন হয় না”। লক্ষ লক্ষ মানুষের মেঠো পথে এবড়ো খেবড়ো পথ চলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানবজীবনের সার্থকতা, শৌখিন ড্রয়িংরুমের উজ্জ্বল আলোয় চলাফেরা করে না তাঁর গল্পের চরিত্রেরা, ভারতবর্ষ নামক বিশাল ভূখণ্ডে ছড়িয়ে আছে যে সমস্ত সংগ্রামী মানুষজনেরা, অনিশ্চিত জীবনযাত্রা যাদের, সামান্য অর্থের মূল্যে বিকিয়ে দিতে হয় নিজেদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি-তাদের কথাই উঠে আসে তাঁর গল্পে, উপন্যাসে। প্রকৃতির সঙ্গে নিজস্ব কথোপকথনে অভ্যস্ত এঁরা বেঁচে আছেন প্রকৃতিরই নিজস্ব শব্দ ও নৈঃশব্দ্যে, মিথ ও পুরাণে। যেমন ছোটগল্প রচনায়, তেমনি উপন্যাস সৃষ্টিতে, প্রবন্ধের বয়নে, কবিতার সুনিপুণ কারুকার্যে লেখিকা বলেন জীবনবোধের কথা, জীবনবাদিতার কথা। তাঁর রচনার অন্তরালে সর্বদাই উঁকি মেরে যায় মনোরম সংবেদনশীল এক মন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সুবিপুল ব্যর্থতা তাঁকে যেমন বেদনাকীর্ণ করে, তেমনি মানুষের প্রতি বিশ্বাস, সহানুভূতি তাঁকে প্রতিনিয়ত নবনবরূপে উন্মোচিত করে। কিন্তু যেখানেই দেখেন অন্যায়, সেখানেই নেমে আসে তাঁর প্রতিবাদ-"আজ আর অন্য কোন পথ নেই বিদ্রোহ ব্যতীত"।
এমনই এক মানবীসত্তার সাহিত্যসম্ভার নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছি এ গ্রন্থে, যেখানে তাঁর লেখা ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতাকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্যের আলোয়। সাহিত্যের বিবিধ প্রকরণে তিনি হাজির হয়েছেন তাঁর বিবিধ সত্তা নিয়ে। এ গ্রন্থ পাঠ করে যদি আরো অনেকে তাঁদের উৎসুক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তাঁর মূল গ্রন্থ পাঠে আগ্রহী হন, সাহিত্য বিচারে এগিয়ে আসেন, তবেই এ গ্রন্থ লেখা সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি