বাঙালির ব্যাটম্যান চর্চা
সম্পাদক : অন্বয় গুপ্ত
"ম্যানহাটানের বিশাল স্কাই্যপারগুলোর নীচে ফরটিন্থ স্ট্রিটের অলিগলিতে রাত বারোটার পর যে নিশুতি নেমে আসে, সেই গা- ছমছমে ভয়াল আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে এই শহরের শিরায় শিরায়। রাতের নিউইয়র্ক চল্লিশের দশকে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে এক লহমায় চলে গেলে যে রূপে ধরা দিত, সেইরূপই মূর্ত এই শহরের হৃদয়তন্ত্রীতে। এ শহর নরক। বড়ো বড়ো বাড়ি, বাঁধানো রাস্তায় ঢাকা পড়েছে অপরাধীদের ঘৃণ্য মুখ। অপরাধ ও পাপের বেসাতি চলে নিরন্তর। ‘This is no place to raise a family'। এ শহরের নাম গোথাম সিটি। এ শহর পাপের শহর। এ শহর ভীত মানুষের শহর। এ শহর ঘৃণার শহর। এ শহর ব্যাটম্যানের শহর।
১৯৩৮-এ সুপারম্যানের মারকাটারি সাফল্যের পর পরই ডিসি কমিক্স (তখন যার নাম ছিল ন্যাশনাল পিরিয়োডিক্যালস্) চাইছিল আরও এক মুখোশ পরা নায়কের অনুপ্রবেশ ঘটাতে। অতএব ডাক পড়ল ফ্রিলান্স কার্টুনিস্ট বব কেনের। এর আগে বব কেন খুব একটা উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ করেননি। মিল্টন ক্যানিফের বিখ্যাত স্ট্রিপ “টেরি এন্ড দ্য পাইরেটস্”- কে অবলম্বন করে “রাস্টি এন্ড হিস প্যালস্” নামে একটি স্ট্রিপ এঁকেছিলেন মাত্র। জন্মসূত্রে জার্মান বব কেনের আদত নাম ছিল রবার্ট কান। নামটি একেবারেই পছন্দ না হওয়ার আঠেরো বছর হওয়া মাত্র নামটি পাল্টে নেন রবার্ট। স্কুলের বন্ধু উইল আইসনারের পরামর্শে কমিক্স আঁকা শুরু ১৯৩৬ নাগাদ। আর দু-বছর যেতে না যেতেই এত বড়ো সুযোগ!
প্রথমেই বব একটা ব্যাপার ঠিক করে নিয়েছিলেন। সুপারম্যান থেকে অনেকটাই আলাদা হবে তার এই সুপারহিরো। সে হবে নিতান্তই এক সুপার পাওয়ারহীন মানুষ। সুপারম্যানের মতো শিষ্টের পালন নয়, বরং দুষ্টের দমনই সেই হিরোর একমাত্র লক্ষ্য। চতুর গোয়েন্দার মতো অপরাধীদের পিছু ধাওয়া করে মোক্ষম সময়ে পাকড়াও করবে তাদের। তখন হলিউডি ফিল্ম ঘরানার নোয়া আর গোয়েন্দা কমিক্স-এর রমরমা। তাই এক সুপারহিরো হিসেবে এক গোয়েন্দা খুব একটা কষ্টকল্পিতও ছিল না। অনেক ভেবেচিন্তে বব বেন লিওনার্দো-দা-ভিঞ্চির বাদুড়ের মতো দেখতে হেলিকপ্টারের মডেল, ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস-এর নির্বাক ছবি জোরো আর ১৯৩০-৩১-এর দুটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র The Bat whispers আর Dracula-কে মিলিয়ে মিশিয়ে বানালেন এক নতুন চরিত্র "ব্যাট-ম্যান” (Bat-Man)। হ্যাঁ, হাইফেন সমেত। ঠিক এই সময়েই কোনো একদিন কেনের সঙ্গে এক পার্টিতে দেখা হল বিল ফিঙ্গার নামের এক জুতো ব্যবসায়ীর। সেই ভদ্রলোক আবার শখের লেখক।
বব তাকে প্রস্তাব দিলেন বেনামে 'রাস্টি' সিরিজটা চালিয়ে যাওয়ার। ফিঙ্গার রাজি হতে বব কথাচ্ছলে তাকে ব্যাট-ম্যানের আইডিয়াটা শোনান। কেমন ছিল সেই ব্যাট-ম্যান? ফিঙ্গারের কথায়, “আমি দেখলাম বব সুপারম্যানের মতই একটা চরিত্র এঁকেছে। টকটকে লাল পোশাক। হাতে দস্তানা নেই, চোখের উপর ছোট্ট একটা মুখোশ। দড়ি ধরে ঝুলে আছে। মজার ব্যাপার, পিঠ বরাবর দুটো শক্ত ডানা, বাদুড়ের ডানার মতো। যাতে বড়ো বড়ো করে 'BAT-MAN' লেখা"। ফিঙ্গার ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন লি ফকের ফ্যান্টমের অন্ধ ভক্ত। তিনি প্রস্তাব দিলেন ব্যাটম্যানের চেহারার খোল নলচে বদলানোর। ফলে পোশাকের রঙ লাল থেকে ধূসর হল, হাতে দস্তানা এল, পিঠে জুড়ল কালো কাপড়ের 'কেপ'। ফ্যান্টমের অনুপ্রেরণাতেই সারা মুখে মুখোশ থাকলেও চোখ হল মণিহীন, সাদা। তবে মাথার দু-পাশে অতিরিক্তভাবে জুড়ে গেল বাদুড়ের তীক্ষ কান। অর্থাৎ ব্যাটম্যানের বর্তমান চেহারা কিন্তু কেন নয় ফিঙ্গারেরই দান। এখানেই শেষ না, ব্যাটম্যানের শহরের নাম গোথাম বা তার আসল নাম ব্রুস ওয়েনও কিন্তু বিল ফিঙ্গারই দিয়েছিলেন।ব্যাটম্যানের প্রথম অভিযানটির লেখকও ফিঙ্গার স্বয়ং কিন্তু যেহেতু ডিসির আগেই কেনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, তাই 'ক্রেডিট'টা একাই মেরে দিলেন শ্রীযুক্ত বব কেন। ফিঙ্গারের অবদান অবশ্য ইতিহাস ভোলেনি। কমিক্স এতিহাসিক রন গুলার্ট তাঁর কমিক বুক এনসাইক্লোপিডিয়াতে ব্যাটম্যানকে আঁকিয়ে বব কেন আর লেখক বিল ফিঙ্গারের যৌথ 'সৃষ্টি' বলে বর্ণনা করেছেন। অনেক পরে বব অবশ্য নিজেও স্বীকার করেছেন, শুরু থেকেই বিল ফিঙ্গারের অবদান ছিল অসামান্য। আমি ব্যাটম্যানকে কেবল সুপারহিরো বানিয়েই ক্ষান্ত ছিলাম। বিলই ওকে একজন বিজ্ঞানমনস্ক গোয়েন্দা বানিয়ে তোলে।
----------------
কীভাবে তৈরি হয়েছিল সকলের প্রিয় ব্যাটম্যান? আজকের এই চেহারায় আসার বিবর্তন কেমন ছিল? কাদের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল এই চরিত্র? তার উত্তর আছে কৌশিক মজুমদারের এই লেখায়।
তবে শুধু ব্যাটম্যানের গড়ে ওঠার কাহিনিই নয়, সেইসঙ্গে খসড়া প্রকাশিত এই বইতে আছে ব্যাটম্যান কমিকস, চলচ্চিত্র এবং এই বহুস্তরীয় চরিত্রটির একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গবেষণামূলক বিচার বিশ্লেষন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.