কৃষ্ণ অর্জুন যাঁদের কাছে হেরেছিলেন
অন্বয় গুপ্ত
"আরাবল্লী পর্বতমালায় ঘেরা গুজরাট রাজ্যের খেড়ব্রহ্মা-দাঁতা এবং রাজস্থানের কোটরা তালুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু ছোটো ছোটো গ্রামে ভিল আদিবাসীদের বাস। তাঁদের মধ্যে পরম্পরাগতভাবে বহুকাল ধরে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল এক নিজস্ব মহাভারত- গাথা। সেই কাহিনির মৌখিক সম্পূর্ণ রূপ সংগ্রহের জন্য ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭- দীর্ঘ চার বছর ধরে সেইসব পাহাড়ি অঞ্চলে নিজে উপস্থিত ছিলেন ভগবানদাস প্যাটেল। সারা বছর ধরে, ঋতুচক্র অনুযায়ী তাদের যে বিভিন্ন ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠান হয়, সে সবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। গায়েনদের মুখ থেকে একটু একটু করে সংগৃহীত সম্পূর্ণ গাথাকে সম্পাদিত করে তিনি বই আকারে প্রকাশ করলেন। সে বইয়ের নাম হল 'ভিলো নু ভারথ'।
এই কাহিনির উল্লেখ আছে ভিল উপজাতির সেই মহাভারতে।
এক দুপুরবেলায় দ্রৌপদী তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাঁর নাক অল্পবিস্তর ডাকছে। দাসীরা পরম যত্নে চিরুনি দিয়ে তাঁর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আঁচড়াতে আঁচড়াতে তাঁর একগাছি সোনালি চুল খসে পড়ল। দাসীরা থরহরি কম্পমান। পাণ্ডবদের শাসন খুবই কড়া। তাঁরা জানতে পারলেই সর্বনাশ। নিজেদের মধ্যে বিস্তর শলাপরামর্শ করে দাসীরা সেই সোনালি চুল শয়নকক্ষের বড় জানলায় গুঁজে রাখল। বাতাস সেইসময় সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তার মনে হ'ল একটু রগড় করা যাক।
হস্তিনাপুরে চারদিক তোলপাড় করে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হ'লে জানলায় গুঁজে রাখা সেই সোনালি চুল উড়ে গিয়ে মাটিতে পড়ল।
পাতালে তখন নাগরাজ বাসুকি বারো বছরের জন্য ঘুমাবেন বলে সবে ঘুমের প্রস্তুতি নিয়েছেন। পদ্মনাগিনীরা চামর দুলিয়ে তাঁকে হাওয়া করছেন। এদিকে দ্রৌপদীর সেই চুলের ভার পৃথিবীর মাটি সইতে না পারায় মাটি ফেটে সেই চুল পাতালে প্রবেশ করে সোজা বাসুকির বুকের উপর এসে পড়ল। বারো বছর ঘুমাবেন বলে যে প্রতিজ্ঞা তিনি করেছিলেন, তা আর রাখা হ'ল না। চুলের ভারে তাঁর বুক কেঁপে উঠল। চুল হাতে নিয়ে তিনি ভাবলেন কে সেই নারী? এ চুল কার?
পাতালের প্রাসাদের সপ্তম কক্ষের দরজা খুলে তিনি পৃথিবীতে যাওয়ার জন্য তৈরি হ'লেন। এ চুল কার, তাঁকে জানতেই হবে।
পদ্মনাগিনীরা তাঁকে বোঝালেন পরস্ত্রীগমন না করাই ভালো। সে পথে অনেক কাঁটা, অনেক অশান্তি। তার চেয়ে বরং রাজা এখানেই থাকুন। বারো বছর ধরে পদ্মনাগিনীরা তাঁকে সেবায়, শৃঙ্গারে আনন্দে ভরিয়ে রাখবেন।
বাসুকি বললেন তিনি শুধু একবার দেখেই চলে আসবেন। ষোলো শৃঙ্গারে সেজে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি রওনা দিলেন। রানিদের বিলাপ আর নিষেধ কানেও নিলেন না"।--অর্জুন বনাম নাগ-দল: অন্বয় গুপ্ত।
বাসুকি কি জানতে পারবেন এই সোনালি চুলের অধিকারিনী কে? দ্রৌপদীর জীবনে কি নেমে আসবে বাসুকির কালো ছায়া?
একধিক আঞ্চলিক মহাভারতের এমনই অনেক অজানা কাহিনি নিয়ে খসড়া প্রকাশিত অন্বয় গুপ্তের এই বই।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.