ভাবত পরিক্রমা
ক্ষিতিমোহন সেন
জ্ঞানে কর্মে, মনস্বিতায়, সহৃদয় ব্যক্তিত্বে সমুজ্জ্বল ছিলেন পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন। ১৮৮০ সালে এক বিদ্বান বংশে তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস পূর্ববঙ্গে হলেও ক্ষিতিমোহন মানুষ হয়েছিলেন কাশীতে। মুখ্যত প্রাচ্যধারায় পড়াশুনা, টোলে চতুষ্পাঠীতে শ্রুতি-স্মৃতি-সাহিত্য-ব্যাকরণ-অলংকার অধ্যয়নে ব্যুৎপন্ন হয়ে ওঠেন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রও আয়ত্ত করেন অল্পবয়সেই। কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠক্রম সম্পূর্ণ করে যথাবিহিত উপাধি অর্জন করেন। তবে পাণ্ডিত্য যতই থাক, পণ্ডিতিতে ছিল তাঁর অনীহা। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ১৯০৮ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ব্রহ্মহ্মচর্যাশ্রমে অধ্যাপনা করতে আসেন। সেই থেকে তাঁর আশি বছরের আয়ুষ্কাল এখানেই কেটেছিল। রবীন্দ্রনাথের নবরত্নসভার অন্যতম জ্যোতিষ্ক তিনি। রাবীন্দ্রিক শান্তিনিকেতনে বাস করে প্রাণরসধারার নিত্যবর্ষণে নিজে সঞ্জীবিত হয়েছেন যেমন, তেমনই আপন প্রাণরসে নিত্য উজ্জীবিত করেছেন শান্তিনিকেতনকে।
লোকান্তরিত হন ১৯৬০ সালে।
জন্ম-পথিক মানুষটি পথের টানে ঘর ছেড়েছেন। ক্রমশ এদেশের নিরক্ষরস্তরের মধ্যে নিহিত শাস্ত্রাচারবর্জিত ব্রাত্যধর্মের আশ্চর্য ঐশ্বর্যের গোপন ভাণ্ডার খুলে গেছে তাঁর সামনে। সাধুসঙ্গ লাভ ও সন্তবাণী সংগ্রহের নেশায় পেয়ে বসে তাঁকে। দর্শনে-শ্রবণে-অধ্যয়নে-পর্যটনে ঋদ্ধ মানুষটি লোকধর্ম ও সংস্কৃতির অন্তহীন ঐশ্বর্য সংগ্রহ ও সংকলনে মনোযোগী হন রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায়।
বিভিন্ন সাময়িক পত্রে প্রকাশিত ক্ষিতিমোহনের মূল্যবান রচনাগুলিকে একত্রীকরণের দুরূহ কাজটি সযত্নে সম্পাদন করেছেন প্রণতি মুখোপাধ্যায়। ১৯৩৭ সালে তাঁর জন্ম। দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর কিছুকাল রামমোহন কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি থেকে প্রকাশিত 'ক্ষিতিমোহন সেন ও অর্ধশতাব্দীর শান্তিনিকেতন' জীবনীগ্রন্থটি তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি