বই - ফো গিউয়ো জি
লেখক - মৌসুমী ভৌমিক
গোম্পার কাছে পৌঁছে চারপাশে দেখে নিল মিশি। ডঃ ফ্রেজারদের গাড়িটা দেখতে পেল না। চারদিকে তাকিয়ে দেখতে পেল না ওঁদের দুজনকেও। মিশি গোম্পার পেছনে পাহাড়ি বুনো ফুলের জঙ্গলে ঢুকে গেল। সাইকেলটাকে এক পাশে শুইয়ে দিল যাতে কেউ দেখতে না পায়। তারপর নিজে শুয়ে পড়ে ব্যাকপ্যাক থেকে ছোট ট্রাইপড বের করে তাতে পোর্টেবল ভিডিও ক্যামেরাটা বসিয়ে চালু করে দিল। গোম্পার এক পাশে খাড়া পাহাড়। আর সেখানে হাজার রকম গাছের জঙ্গল। মিশি চারদিকে তাকিয়ে জমাট অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পেল না।
মিনিট দশেক অপেক্ষার পর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। লামারা একে একে গোম্পার বাঁ দিকের ভাঙা স্তূপের পাশে এসে দাঁড়ালেন। মিশি গুনে দেখল বারো জন। তাঁদের মধ্যে লোচেনও আছেন। দুজন লামা স্তূপের এক পাশে দুটো মশাল জ্বালিয়ে দিল। আর সেই মশালের আলোতে এক ভয়ানক মূর্তি দেখে মিশি চমকে গেল। মূর্তিটি স্তূপের এক পাশে প্রতিষ্ঠিত। মূর্তির ভয়াবহতায় মিশি কেঁপে গেল ভেতরে ভেতরে।
“ওহ বয়, কী ভয়ংকর দেখতে!” নিজের মনেই বলে ওঠে মিশি। বিস্ফারিত চোখে মিশি দেখল লালচে মূর্তিটির চোখ-মুখ অসম্ভব ক্রোধে ফেটে পড়ছে। অদ্ভুত এক অভিব্যক্তি! ওর মনে একটাই প্রশ্ন জাগল কীভাবে একজন না দেখা ঈশ্বরকে এরকম রূপ দিতে পারে মানুষ! এত জিঘাংসা কোনো দেবতার চোখে থাকে? নাকি মানুষ এভাবে তার নিজের ষড়রিপুর রূপ প্রদান করে? মূর্তিটি নগ্ন অবস্থায় নৃত্যরত ভঙ্গিতে একটি মানুষের মৃতদেহের উপর দণ্ডায়মান। মূর্তিটির মাথার ডান দিকে একটি বরাহের মাথা। মাতৃকারূপী ঈশ্বরের এমন ভয়ংকরী রূপ দেখে শরীর গুলিয়ে উঠল মিশির।
এবার বেরিয়ে এলেন চওড়া কাঁধের সামান্য স্থূলদেহী একজন মধ্যবয়স্ক লামা। আপার মনাস্ট্রির লোটাস সূত্রের সাধক লামার মতো ইনিও সম্পূর্ণ নগ্ন। ওঁর হাতে একটা থালা। মূর্তিটির কাছে গিয়ে লাল আবিরের মতো কিছু গুঁড়ো মূর্তিটির গায়ে ছড়িয়ে দিলেন। তারপর বসলেন যোগাসনে। তিনি তাঁর বুকের কাছে বাঁ হাত ভাঁজ করে এনে বাঁ হাতের মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠার অগ্রভাগ বৃদ্ধঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে স্পর্শ করে তর্জনীকে সোজা করে রাখলেন এবং ডান হাত তাঁর ডান হাঁটুর উপর টানটান করে রাখলেন। বারোজন লামা তাঁর থেকে মোটামুটি দু’ ফুট দূরত্বে বসলেন। মিশি দেখল সবার হাতে সিঙ্গিং বউল। ওম ধ্বনি দিয়ে প্রার্থনা শুরু হল। নগ্ন লামা এবার হাতের মুদ্রা পালটালেন। বাঁ হাতের তালুর উপর ডান হাতের পিছন রেখে অদ্ভুত উচ্চারণে মন্ত্র বলতে লাগলেন। ঠিক সেই সময় দুজন লামা উঠে গিয়ে দাঁড়ালেন দেবী মূর্তিটির পাশে। এবার মিশি খেয়াল করল সেখানে এক ভিক্ষুণী ধ্যানরতা। লামা দুজন ওঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ালে উনি আসন ছেড়ে উঠে ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালেন নগ্ন ভিক্ষুর সামনে। চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র ত্যাগ করে তিনিও সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ভিক্ষুর মুখোমুখি যোগাসনে বসলেন। তারপর এসে বসলেন ভিক্ষুর কোলে। লামাদের মন্ত্রের তীব্রতা তখন চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে, আর সেই সঙ্গে মিশির মনে হল ওর চোখের সামনে সাধনার নামে লাম্পট্য চলছে। কুলকুণ্ডলিনী সাধনার নামে অসংযত যৌনাচার চলছে---- শীৎকার, আলিঙ্গন, চুম্বন, রমণ কী হচ্ছে না! সবই হচ্ছে। মিশির গা গুলিয়ে টকজল উঠে এল। আর কিছু দেখবার ক্ষমতা রইল না ওর।
সমস্ত কিছু গুটিয়ে নিয়ে নিঃশব্দে সাইকেল নিয়ে ফিরে এল লজে। নিজের রুমে ঢুকে সোজা চলে গেল বাথরুমে। পেট খালি করে বমি করে ধাতস্থ হল। বিছানায় শুয়েও স্বস্তি হচ্ছে না। সাধনার নামে এই স্থূলতা, বীভৎসতা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ল ও। এরপর জ্বরের ঘোরে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.