গীতাঞ্জলি
মূল পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
" শেষপর্বে মংপুতে বসে একদিন রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন আমি কোনো দেবতা সৃষ্টি করে প্রার্থনা করতে পারিনে, নিজের কাছ
থেকে নিজের সেই দুর্লভ মুক্তির জন্য চেষ্টা করি। সে চেষ্টা প্রত্যহ করতে হয়, তা না হ'লে আবিল হ'য়ে ওঠে দিন। আর 'তো সময় নেই, যাবার আগে সেই বড়ো আমিকেই জীবনে প্রধান করে তুলতে হবে, সেইটেই আমার সাধনা ।
এই সাধনাই মুক্তিসন্ধানী কবির আজীবনের সাধনা। কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের আকস্মিক মৃত্যুর (৭ অগ্রহায়ণ ১৩১৪) পরে প্রথমে যে গানে তাঁর হৃদয়ের প্রকাশ তা হল, ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে।' অন্তরস্থিত দেবতার প্রতি তাঁর এই সমর্পিত প্রাণের অর্ঘ্য এই আত্ম-উন্মোচনের প্রেরণা গীতাঞ্জলির অনেক রচনাতে পাওয়া যায়। গীতাঞ্জলি পর্বের ভাবের স্রোত বয়ে চলেছে গীতিমাল্য-গীতালির রচনাগুলির মধ্য দিয়ে।
১৩১৭ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে ১৫৭টি নূতন গান ও কবিতার একটি সংকলন ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস থেকে গীতাঞ্জলি নামে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক সতীশচন্দ্র মিত্র।
সেসময় শরীর তাঁর সুস্থ ছিল না। কিছুদিন থেকেই লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য আত্মীয়দের তাগিদ ছিল। ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ তারিখে লন্ডন রওনা হওয়ার আগের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে বিশ্রামের জন্য চলে গেলেন শিলাইদহে। সেখানে বিশ্রামকালে কবি নিজের বেশ কিছু গান ও কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ শুরু করেছিলেন। মাঝে চৈত্রসংক্রান্তির দিন ফিরেছিলেন শান্তিনিকেতনে। যোগ দিয়েছিলেন নববর্ষের উপাসনায়। ২০ বৈশাখ আবার ফিরে যান শিলাইদহে। তখনও নূতন রচনার প্রেরণা যেমন · আছে, মন তেমনি আগের মতোই লিপ্ত আছে অনুবাদ কর্মে। ..."