মহাভারতে নারীজীবন
দেবীদাস আচার্য
প্রচলিত ধারণা হল, মহাভারতের কালে সমাজে নারীর স্থান ছিল বেশ উঁচুতে। সত্যিই কি তাই? না কি, আমাদের এই দীর্ঘলালিত ধারণায় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে? আসলে মহাভারতের বিন্যাস বেশ অগোছালো বলে অনেক সময় দরকারি তথ্য গোলকধাঁধায় আটকে পড়ে। আলগোছে কিছু নারী চরিত্রের ঝলক দেখিয়ে সেই সমাজে সব নারীর জীবনের ছবি বলে চালানোর প্রবণতা হয়। স্বাভাবিকভাবেই তাতে অসম্পূর্ণতা থাকে। খুঁটিয়ে তথ্যসন্ধান করলে কেবল দ্রৌপদী, গান্ধারী, কুন্তী, সত্যবতী, শকুন্তলা, সাবিত্রী— এমন সব রানি ও রাজকন্যাদের আলোকিত উপস্থিতিই নয়, মহাভারতের ক্যানভাসে ফুটে ওঠে তাবৎ নারীসমাজের অন্যতর জীবনচক্র। সাধারণ, অসাধারণ সবার। জন্ম, শিক্ষা, বিয়ে, মাতৃত্ব, বৈধব্য— শুরু থেকে শেষ, নারীজীবনের চলন যেখানে ধরা রয়েছে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। তার পরিমাপও পুরুষের নিক্তিতে। নারীর জগৎ স্বামীতে শুরু, স্বামীতেই শেষ। তাকে অনুগত রাখতে পুরুষ তার মনকে বেঁধেছে। স্মৃতি ও ধর্মশাস্ত্রের সঙ্গে মহাভারতও সে বাঁধন শক্ত করতে হাত লাগিয়েছে। নারীর স্বাতন্ত্র্য সেখানে সোনার পাথরবাটি। এদেশে পুরুষদের একটা বড় অংশের মধ্যে এখনও একেই সনাতনী বিশিষ্টতা বলে আঁকড়ে রাখার জবরদস্তি দেখা যায় বলেই দু’হাজার বছর আগের এসব প্রসঙ্গ নিয়ে আজও মাথা ঘামানো জরুরি হয়ে পড়ে।
লেখক পরিচিতি :
দেবীদাস আচার্য পেশায় সাংবাদিক। কর্মস্থল ছিল আনন্দবাজার পত্রিকা। এখন সাংবাদিকের কৌতূহল নিয়েই অতীত ও বর্তমানের সমাজ-রাজনীতির প্রেক্ষিতে এ দেশের প্রাচীন সাহিত্য— বিশেষত, রামায়ণ-মহাভারতের ব্যতিক্রমী পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করে চলেছেন। এই গ্রন্থ সেই অন্বেষণেরই অন্যতম নিদর্শন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি