মোকাম ইংলিশবাজার
দীপক মন্ডল
১৬৮০। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (EIC) বাণিজ্য তরী, রাজমহল হয়ে স্পর্শ করলো কালিন্দী ও মহানন্দা নদী যেখানে এক খাতে মিশেছে, সেই মালদায় (বর্তমান নাম ওল্ড মালদা)। যদিও ১৬৭৬ সাল থেকে মালদার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে EIC খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছিলো।
ইতিপূর্বে অবশ্য আর এক বিদেশী বণিক দল, ডাচ রা এখানে ব্যবসা শুরু করেছে। মালদা তখন সুবে বাংলার অধীনে। EIC এখানেই ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে। কিন্তু কিছুদিন পরেই, সুবেদারের ফৌজদারের সাথে ইংরেজদের বিভিন্ন কারণে সংঘাত শুরু হয়। ফলে তারা তাদের ব্যবসা মহানন্দা নদীর পূর্ব তীরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলো, যা কিনা বর্তমান জায়গা থেকে, তিন চার মাইল দূরে অবস্থিত। ঐ অঞ্চল পূর্ণিয়া সুবার অধীনে, সেখানে বাংলা সুবার মতো কর অতটা কঠোর ভাবে আদায় করা হতোনা। ইংরেজ বণিকরা, মকদমপুরের জমিদার রাজা রায় চৌধুরীর সহয়তায় প্রায় পঞ্চাশ বিঘা জমি কিনে নিয়ে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করলো এবং ব্যবসা শুরু করলো। সেই কুঠিকে ঘিরে ক্রমশঃ গড়ে উঠতে লাগলো জনপদ। গড়ে উঠলো হাট, বাজার। রংরেজ বলে এক ধরণের পেশা ছিলো যাদের কাজ ছিলো কাপড়ে রং করা। তাদের এই পেশাঅনুযায়ী এই জায়গার নাম প্রচলিত হতে থাকলো রংরেজবাজার। সেই নাম পরিবর্তিত হয়ে নাম হলো ইংলেজাবাদ। অবশেষে সেই জায়গা পরিচিতি লাভ করলো ইংরেজবাজার বা ইংলিশ বাজার নামে। কিছুদিনের মধ্যেই ECI এর ব্যবসা জমে উঠলো। কিন্তু বাংলা সুবার কর্তা শায়েস্তা খাঁয়ের সাথে কোম্পানির সংঘাত তুঙ্গে পৌঁছালো। শুল্ক ছাড়া ইংরেজদের ব্যবসা করতে বাঁধা দিলেন তিনি। এই সংঘাতের জেরে বিভিন্ন স্থানের কুঠির সাথে মালদার নব নির্মিত কুঠিও ধ্বংস করা হলো। যদিও মালদা কুঠি আবার চালু হলো। পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলা তথা ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে এক বিশাল পরিবর্তন এলো। ১৭৭১ সালে টমাস হেঞ্চম্যান সাহেব ইংরেজবাজারে তৈরি করলেন একটি সুরক্ষিত বাণিজিক কুঠি বা রেসিডেন্সি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রেসিডেন্ট এসেছেন এবং ইংরেজবাজার কুঠিকে লাভজনক কুঠিতে পরিণত করছেন। ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে রাস্তা ঘাট। ক্রমশঃ অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ার জন্য একদিকে পূর্বদিকে বর্তমান বাংলাদেশ এবং রাজমহলের গঙ্গা দিয়ে একদিকে কলকাতা ও উত্তর পূর্ব ভারতের সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা নিবিড় ছিলো।
ব্যবসা করতে গিয়ে EIC মালদহের রেশম ও সুতি বস্ত্রের তাঁতিদের উপর নামিয়ে এনেছে নির্মম শোষণ। ফলে মাঝে মাঝেই দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত বেঁধেছে। রাজ কর্মচারীদের সীমাহীন লোভ এবং দুর্নীতি তথা অসামাজিক জীবন যাপন সাধারণ মানুষকে অসহায় করে তুলতো প্রতিনিয়ত বলগাহীন ভাবে। অবশেষে ১৮৩৩ সালে ইংল্যান্ডের সংসদে পাশ হওয়া সনদ মোতাবেক, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই দেশে ব্যবসা করার অধিকার হারায় এবং শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাজ করবার দায়িত্ব ইংল্যান্ড সরকার, কোম্পানির উপর দেয়। সারা দেশের সাথে সাথে ইংরেজবাজারের ব্যবসা কেন্দ্র গুলি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৫৩ বছরের কোম্পানির ইংরেজবাজারের ব্যবসা কেন্দ্রর বহুমাত্রিক টানাপড়েন নিয়ে উপন্যাস "মোকাম ইংলিশবাজার"। রচনা দীপক মন্ডল।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি