রক্তগোলাপ
অভিষেক দেবরায়
সত্তরের দশক মানেই বাঙালির জীবনের এক এমন অধ্যায় যা একইসঙ্গে নৈরাজ্যের, একইসঙ্গে প্রাপ্তির। অতি বাম রাজনীতির কিছু নেতা প্রতিশ্রুতিবান এক দল ছেলেমেয়েকে বিপ্লবী বানিয়ে রাতারাতি সব পালটে ফেলার স্বপ্ন দেখিয়ে এক নৈরাজ্যের জন্ম দিয়েছিল। হয়তো তারা রাষ্ট্রের অচলায়তনকে ধাক্কা দিয়েছিল কিন্তু তাতে পরিবর্তনের চেয়ে ক্ষতিই হল বেশি। আবার একইসঙ্গে অজস্র শিল্পী সাহিত্যিক উঠে এলেন সে সময় যারা পরবর্তী পাঁচটি দশক জুড়ে তাদের সৃষ্টি দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন ও আজও করছেন। তাই আতঙ্ক হোক কিংবা রোম্যান্টিকতা, এই সময় বাঙালির আধুনিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, একে অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
‘রক্তগোলাপ’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট সেই সত্তরের দশক। গল্পের বিন্যাসের ক্ষেত্রে সেখানে ব্রিটিশ ভারতের সময় থেকে বাম ও পরে অতি-বাম আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ও উত্থানের ইতিহাসও সংক্ষিপ্ত ও নিরপেক্ষভাবে বিবৃত করা রয়েছে। কিন্তু এই উপন্যাস না তো সেই সময়কার কোনো ডকুমেন্টারি না এই উপন্যাস এক রাজনৈতিক আখ্যান। এই উপন্যাস লেখার পেছনে অভিষেক অনুপ্রেরণা হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের A Tale of To Cities-কে আর সেই একই ধাঁচে এই উপন্যাস মূলত প্রেমের উপন্যাস। সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প। রাজনৈতিক ভাষণ কিংবা পক্ষপাতিত্ব এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য নয় তাই সেটা অনুপস্থিত। নকশালদের ট্র্যাজিক হিরো আর পুলিশ ভিলেন কিংবা উলটোটা--- এখানে তথাকথিত নকশাল জমানার অন্য সাহিত্য সিনেমা বা থিয়েটারের মতন কোনও নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ চাপিয়ে দেওয়া নেই। ভাবনাচিন্তা সব পাঠক বিচার করবেন।
এই উপন্যাসের মূল থিম সুব্রত ও মল্লিকার সম্পর্কের ওঠা-পড়া। এক আদর্শবান কমিউনিস্ট যুবক ও এক সাহসী আধুনিকা যুবতীর চোখ থেকে যেন দেখা এই উপন্যাস। নির্মল চক্রবর্তী, মিহির চ্যাটার্জী, সুধীন বিশ্বাস, তরুণ সেন, বাবলু, প্রভাস, নীহার, দীপক, অমলাংশু এবং আরও অজস্র চরিত্র আবর্তিত হয়েছে সুব্রত ও মল্লিকাকে ঘিরেই। কাশীপুর বরানগর হত্যাকাণ্ডের কিছু বাস্তব ঘটনা ধরা রয়েছে এই উপন্যাসে। একইসঙ্গে পাতিপুকুরের প্রবীণ কংগ্রেসি নেতা ও সমাজসেবী পীযূষ ঘোষের হত্যাকাণ্ডের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যা সম্ভবত এই প্রথম। সবচেয়ে বড় কথা এই উপন্যাসের ন্যারেটিভ টেকনিক আলাদা, কারণ এই উপন্যাসের সব ঘটনাই একাত্তর সালে দাঁড়িয়ে লেখা, ফলে সবটাই বর্তমান, কোনও অতীত স্মৃতিচারণার ছায়া নেই। ক্রিকেট থেকে বিজ্ঞাপন সবকিছুর মধ্য দিয়ে ধরা হয়েছে সেই সময়টিকে, একইসঙ্গে জায়গা পেয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধ। ফলে এটুকু বলতে পারি এই উপন্যাস পড়ে খুব সহজেই সেই সময়টায় চলে যেতে বড় একটা অসুবিধে হবে না পাঠকদের।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.