শাড়ির ভিতর পঙ্খীখানি
সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য
রূপনারায়ণের বাঁকে, নিদাঘ থেকে বসন্তে, বৃষ্টির দোলাচলে মিশে আছে কিশোরী মনের একলা কথা। নৌকোর গলুই থেকে ধোঁয়া ওঠা দুপুরে মাঝিদের সঙ্গে মাছ পুড়িয়ে খেতে খেতে বা নদের ওপরে অশ্বত্থ গাছের নেমে আসা ডাল ধরে দুলতে দুলতে রেলব্রিজের ঝমঝম শব্দ কিশোরীটিকে মনে করিয়ে দেয় তোমার ছুটি শেষ। ফিরে যেতে হবে হোস্টেলে।
আবার কাকলি আবার স্বর্ণাদি আবার কুঞ্জসাহেবের ঘাটের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া টিয়ার দল মনের ভেতরে উঁকি দিয়ে ওঠে। বড় মিসের গমগমে কণ্ঠের 'মে গড ব্লেস ইউ' ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে শাপলা ভরা দিঘিটিতে। সেই স্বর অন্তর থেকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়।
বড় হতে হতে কিশোরী মন কখনও চাঁদের অনুষঙ্গে প্রেমকে খোঁজে। কখনও লুনাটিক দিদির প্রেমিকের সঙ্গে নিশিলাগা দিদির সম্পর্ককে প্রেম নামক তকমায় আটকে যেতে দেখে অবাক চোখে ভাবে প্রেম আসলে কী? হোস্টেলের নুপূরদির সঙ্গে তার প্রেমিক মিনুকার দাদার হেসে হেসে কথা বলাই কি তবে প্রেম?
সেই ছোটবেলা থেকেই সে কোনোদিনই গোড়ের মালায় শোভাবর্ধনকারী গোলাপ হতে চায়নি। একলা কিশোরটি যখন তাকে চিঠি লিখে তার একাকীত্বে ভাগ বসিয়ে ঘনিষ্ঠ হতে চায় তখনও না। লাল টুকটুকে কবিতার খাতাটি তার একলা থাকার সঙ্গী।
ফ্রক থেকে শাড়ি হয়ে ওঠা জীবনের নানা ছন্দে মেয়েটি কিন্তু কখনও ভোলে না তার প্রিয় গীতাঞ্জলি মিসের কথা,
''জীবনে যা সত্য বলে জানবি তাকেই গ্রহণ করবি''।
নদের পাড়ের কিশোরীটির লিপিবদ্ধ জীবন প্রব্রজ্যা 'শাড়ির ভিতর পঙ্খীখানি।'
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি