ভার্গবাস্ত্র : সেলুলার জেলে বাংলার দামাল ছেলেরা
শাওন
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনকৃত অপমানের প্রতিবাদে বিপ্লবীরা বাংলায় পিস্তলের গুলি চালাতেন, স্থানে স্থানে বোমা ফাটাতেন। সরকার তাঁদের 'অ্যানার্কিস্ট' আখ্যা দিয়েছিল। বিপ্লবীদের দাবি ছিল--- পূর্ণ স্বাধীনতা। যুবকেরা জানতেন পূর্ণ স্বাধীনতা নরমপন্থীদের আবেদন-নিবেদনে আসবে না। স্বাধীনতা আসবে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে। দেশপ্রেমের আবেগ ও উন্মাদনায় বিপ্লববাদীরা এগিয়ে চলছিলেন মৃত্যুর মুখোমুখি, স্বাধীনতার লড়াইয়ে। তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল জন্মভূমিকে স্বাধীন ও মুক্ত করা । এই বিপ্লবীদের মধ্যে যাঁদের ফাঁসি বা গুলিতে মৃত্যু হত না তাঁদের দীর্ঘমেয়াদী সাজা দিয়ে আন্দামানে পাঠানো হত। সেলুলার জেলের রাজনৈতিক কয়েদিদের দীর্ঘ তালিকা জুড়ে বেশিরভাগ বাংলার বিপ্লবীরা রয়েছেন। জানতে ইচ্ছা করে তাঁদের পুঙ্খানুপুঙ্খ সংগ্রামের কথা, তাঁদের দেশভক্তির কথা, তাঁদের ত্যাগের কথা এবং জেলের ভেতর কেমন ছিল তাঁদের অভিজ্ঞতা। যেমন অনশনরত ষোলো বছরের ননীগোপালকে ৪৫ দিন ধরে হাতকড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। শারীরিকভাবে দুর্বল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর আশুতোষ লাহিড়ীকে জেলের কাজে অক্ষমতার জন্য ২০ ঘা বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। জেলের ডাক্তার টড সাহেব বিপ্লবীদের উদ্দেশে বলেছিল, “আমি তোমাদের ঘৃণা করি।" বিপ্লবীরা প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, “তোমরা যে প্রায় দু'শো বছর ধরে আমাদের দেশ লুন্ঠন করছ!" এই কারণে জেল কর্তৃপক্ষ বিপ্লবী সুধেন্দ্রচন্দ্র দাম , প্রবীর কুমার গোস্বামী ও চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে যথাক্রমে ২০ ও ৩০ ঘা বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন। জেলে ইন্দুভূষণ , মোহিতকুমার মৈত্র ও মোহন কিশোর নামদাসের মৃত্যু হয়েছে। উল্লাসকর, জ্যোতিষচন্দ্র পালের মতো কেউ কেউ অর্ধোন্মাদ হয়ে গেছিলেন। এই সমস্ত নিরস্ত্র বিপ্লবীদের একমাত্র অস্ত্র ছিল আমরণ অনশন। বিপ্লবীদের এই প্রবল প্রতিরোধ যেন পুরাণের 'ভার্গবাস্ত্রে'র সঙ্গে তুলনীয়। এই অস্ত্রের শক্তি ব্রহ্মশিরাস্ত্রের অনুরূপ। পুরাণে বলে 'ভার্গবাস্ত্র' যেখানে লক্ষ্যভেদ করে সেই অঞ্চল ভস্মে পরিণত হয়। ঠিক সেভাবেই বিপ্লবীদের প্রতিবাদে একসময় ইংরেজ বন্দি রাখার প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের বিরত করল। ১৯৩৮ সালের পর আর কোনো রাজবন্দিকে সেলুলার জেলের পিছনে শাস্তি পেতে হয়নি।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.