আমাদের শব্দচর্চা যতটা সশব্দে হওয়া উচিত ছিল, ততটা হয়নি। সেই কবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলা শব্দতত্ত্ব’ লিখেছিলেন, তারপর বিরাট শূন্যতা। শব্দ নিয়ে ভাবনা, স্থাননামে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন শব্দ নিয়ে আলোকপাত, পূজাপার্বণ-ব্রতকথার নামে প্রাচীন শব্দের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা বিশেষ একটা হয়নি। যাদের কাছে শব্দচিন্তা মানে হিমানীশ গোস্বামীর অভিধানাইপানাই, তাদের জন্যে করুণা হয়। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘বাংলা কী লিখবেন কেন লিখবেন’ অনেকটা প্যামফ্লেটধর্মী, বরং তাঁর কবিতার ক্লাস অনেক বেশি রসদ জোগায়। শঙ্খ ঘোষের ছন্দের বারান্দা ছন্দ নিয়ে অনেক কিছু শেখায়, শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে সেখানে বিশেষ কিছু নেই। জ্যোতিভূষণ চাকী দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক লিখেছিলেন ‘বাগর্থকৌতুকী’। তাতেও কিন্তু সিরিয়াসনেসের সঙ্গে লঘু রসের মিশ্রণ ঘটেছিল। সিরিওকমিক লেখা ছিল সেটি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের শব্দ নিয়ে ভাবনাচিন্তা কিন্তু অনেক সিরিয়াস ধাঁচের। দেশ পত্রিকায় তাঁর শব্দ নিয়ে চিঠিপত্রগুলিও ছিল সিরিয়াস। নবনীতা দেবসেন, পলাশবরণ পাল, স্বপন চক্রবর্তীও বিক্ষিপ্তভাবে শব্দ নিয়ে চর্চা করেছেন বিভিন্ন লেখায়, কিন্তু শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে যেন তাঁদেরও কোনও মাথাব্যথা নেই। অগত্যা ব্যুৎপত্তি জানতে হাতে রইল পেন্সিল, সেই মোটাসোটা, রোগাপাতলা অভিধান। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ-এ যা ব্যুৎপত্তি দেওয়া হয়, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধান তার উল্টোমুখে হাঁটে মাঝে মাঝে। বঙ্গীয় শব্দকোষ-এও শব্দের ব্যুৎপত্তি মাঝেমাঝে জিজ্ঞাসা-কণ্টকিত। অনেক শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়েই তিনি স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। এই জিজ্ঞাসাচিহ্নগুলিই স্বশিক্ষিত গবেষকদের কাছে মাইলফলকের সমান। অনেক খননকার্য করা যায় এই ক্ষেত্রটি নিয়ে। দরকার হল আদাজল খেয়ে লেগে থাকার মানসিকতা। সেই মানসিকতাই নেই এখনকার লেখক ও গবেষকদের। কারণ এতে চটজলদি নামডাক হয় না। তার চেয়ে কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ ও কতিপয় উপন্যাস লেখাই শ্রেয় বলে ভাবেন বেশির ভাগ সাহিত্যিক। অসিতবাবু সেই ব্যতিক্রমী গোত্রের লেখক। চটজলদি নাম কেনার বাসনা পরিত্যাগ করে শব্দের ব্যুৎপত্তির সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বহু বছর ধরে। তারই একটি সোনালি ফসল এই নব্য ‘শব্দকল্পদ্রুম’।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.