শতবর্ষে বিবেকানন্দ-বিরোধিতা : প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে
অনিরুদ্ধ সরকার
......চলে আসি ৪ জুলাই ১৯০২ এর কথায়। দিনটা ছিল শুক্রবার। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে, স্বামীজি মন্দিরে গেলেন উপাসনার জন্য। তার মধ্যে অসুস্থতার কোনও লক্ষণ নেই। ব্রেকফাস্টের সময় সকলের সঙ্গে বেশ হাসি ঠাট্টা হল। যেমন গরম দুধ, ফলাদি খান সেইরূপ খেলেন ও স্বামী প্রেমানন্দকে খাওয়াবার জন্যে কত আগ্রহ করলেন। চা-কফি যেরকম খেয়ে থাকেন তাই খেলেন। গঙ্গার একটি ইলিশ মাছ এ বছর প্রথম কেনা হল, তার দাম নিয়ে স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে কত রহস্য হল! এক বাঙাল মাঝিকে ডেকে বললেন, "তোরা নতুন ইলিশ পেলে নাকি পুজো করিস?"
"কী দিয়ে পুজো করতে হয় কর।" প্রভাতী ভ্রমণে বেড়াতে বেড়াতে স্বামী প্রেমানন্দকে বললেন, আমায় কেন নকল করবি? ঠাকুর নকল কত্তে বারণ করতেন। আমার মতন উড়নচড়ে হবি নে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ প্রেমানন্দকে বললেন, “আমার আসন ঠাকুরের শয়নঘরে করে চারিদিকের দরজা বন্ধ করে দে।” ঠাকুরঘরে স্বামীজির ধ্যান শুরু সকাল ১১টায় স্বামীজির ধ্যানভঙ্গ হল। স্বামীজি গুন গুন করে গাইছেন– "মা কি আমার কালো, কালোরূপা এলোকেশী, হৃদিপদ্ম করে আলো।" ধ্যানান্তে স্বামীজি নিজের হাতে ঠাকুরের বিছানা ঝেড়ে দিলেন। তারপর......
কখনও ভেবে দেখেছেন বাঙালি আজও স্বামী বিবেকানন্দকে কতটা নিতে পেরেছে? উত্তর সম্ভবত কারো কাছেই নেই। একশ্রেণির বাঙালি একটা সময় প্রতিপদে স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করেছে, হেয় করেছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্যদের দেখে হাঁসের ডাক ডেকেছে। স্বামীজিকে কটাক্ষ করে বলেছে, “কায়েতের ছেলে হয়ে সন্ন্যাসী!” সেই বাঙালিদের একটা বৃহত্তরগোষ্ঠী আবার পরে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে মাতামাতি করেছে। স্বামীজির ঘনিষ্ঠ ভক্ত-শিষ্য থেকে প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বহু দিক্পাল বাঙালিই বিবেকানন্দের বিরোধিতা করেছেন প্রকাশ্যে। সে-যুগে কেউ কেউ বই অবধি ছাপিয়ে বিলি করেছেন। বাঙালির এই বিবেকানন্দ-বিরোধিতা প্রায় শতবর্ষ ছাড়িয়েছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের প্রায় পঞ্চাশজনের বিরোধিতা নিয়েই এই গ্রন্থের নির্মাণ।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.