শ্যামাপ্রসাদ ও দেশভাগ
গৌতম রায়
দেশভাগ বাঙালি জীবনের স্থায়ী ক্ষত! দেশভাগের অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পরে, এই বিষয়টি ঘিরে চর্চার বিরাম নেই। হিন্দু বাঙালির কাছে দেশভাগের জন্যে মুসলমানকে দায়ী করা একটা দস্তুর হয়ে উঠেছে। ১৯৩৩ সালে কেমব্রিজের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলি যখন মুসলমানদের জন্যে ভিন্ন রাষ্ট্রের কথা জিন্নাকে বলেন, ছাত্রসুলভ বালখিল্য বলে সেকথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন জিন্না। যদিও তার অনেক আগে, উনিশ শতকের শেষ দিকে, লালা হরদয়াল, ট্রিবিউন পত্রিকা, লালা লাজপত রাইয়েরাই দেশভাগের প্রথম পরিকল্পনা করেছিলেন। বিশের দশকে সেই পরিকল্পনাকেই বাস্তবায়িত করতে আদাজল খেয়ে নেমেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ।
ধর্মান্ধ হিন্দু- মুসলমানের অভিন্ন শ্রেণীস্বার্থ রক্ষায় দেশভাগের কুশীলব ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ, নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গোপাল মুখার্জী, গোলাম সারোয়ারেরা। 'দানব' শ্যামাপ্রসাদকে 'দেবতা' বানানোর অবিরত চেষ্টা করে চলেছে তাঁর রাজনৈতিক সতীর্থেরা। উদ্দেশ্য, সম্প্রীতির ভারতকে খানখান করা। উদ্দেশ্য, মুসলমান মুক্ত ভারত! এখানেই শেষ নয়! তারা চায়, প্রতিবেশি বাংলাদেশ আবার হয়ে উঠুক পাকিস্থানের ছায়া উপনিবেশ। লাখো শহিদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে বানচাল করতে শ্যামাপ্রসাদ-গোলাম সারোয়ারের উত্তরসূরিরা আজও সমান সক্রিয়।
দেশভাগের পণ্যায়ন নয়। একতরফা ভাবে দেশভাগের দায় মুসলমানের উপর চাপিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ নয়। হিন্দু বা মুসলমান এই পরিচয় দিয়ে, সেই ধর্মীয় পরিচয়ের চরম অবমাননা করে কিভাবে ধর্মের রাজনৈতিক কারবারীরা দ্বিখন্ডিত করলো বাঙালিকে, আর সেই কাজে শ্যামাপ্রসাদ আর তাঁর শাগরিদেরা, তা তিনি জন্মসূত্রে যে পরিচয়বাহীই হোন না কেন- এ গ্রন্থ ইতিহাসের অপনির্মাণের সেই দূরাত্মাদেরই পরিচয়বাহী।