ভারতীয় উপমহাদেশের যে ইতিহাস জনসাধারণ্যে চর্চিত, ইসকুল-কলেজে পঠিত ও কথাবার্তায় নজির হিসাবে উল্লিখিত হয়, তার তলে তলে চলতে থাকে ‘অপর’ নির্মাণের প্রক্রিয়া। তারই প্রতিফলন প্রাক্-ঔপনিবেশিক ভারত-অতীতকে ‘হিন্দুযুগ’ ও ‘মুসলমানযুগ’— এই দুই পরস্পর-বিরোধী কাল-সত্তায় ভাগ করার প্রচলিত প্রবণতা। যুগবিভাগের এই ছকের তলে তলে যেন অনড় হয়ে আছে একে অন্যের বৈর, অপরিবর্তনীয়, সমসত্ত্ব চরিত্রের দুই স্বতন্ত্র রাজনীতিক-সাংস্কৃতিক সত্তার দ্বন্দ্ব। অথচ, সংস্কৃত আকরে ‘মুসলমান’ নামে কোনো সমসত্ত্ব পরিচয়ের উল্লেখ পাওয়া যায় না। কিন্তু, আজ যখন ‘অপর’ নির্মাণের প্রাবল্যে অতীতের সেই বহুত্বকে নস্যাৎ করে সরলীকৃত ও কল্পিত ‘ইতিহাস’ তুলে ধরা হচ্ছে, তখন মূল আকরের বিশ্লেষণ-পুনর্বিশ্লেষণের দায়িত্ব ঐতিহাসিকের থাকে বৈকি।
ইদানীং, ‘হিন্দুযুগ’ কিংবা ‘মুসলমানযুগ’ আখ্যা বিশেষ ব্যবহৃত না-হলেও, হিন্দু-মুসলিম বিভেদের ধারণা মানসিকতায় এমন নিহিত হয়ে আছে যে, অতীত-বিচারে তার প্রভাব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘হিন্দুযুগ’-উৎসারিত ‘আলো’ কিছুতেই যেন দা-কাটা বিভাজনের ওপ্রান্তে ‘মুসলমানযুগ’-এর ‘অন্ধকার’ দূর করতে পারে না। যেন, ‘মুসলমান’ মানেই ‘আক্রমণকারী বহিরাগত’, যে কিছুতেই ‘দেশীয়’ হয়ে উঠতে পারে না। এই গ্রন্থটি যে পাঠক শেষ পর্যন্ত পড়বেন, তিনি নিশ্চয় খেয়াল করবেন যে, প্রাচীন সংস্কৃত রচনাগুলি সেই ‘চির বিরোধিতা’-র তত্ত্ব সমর্থন করে না। আশা করা যায়, এই আলোচনা ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আউড়ে-চলা বুলিগুলির অন্তঃসারশূন্যতা তুলে ধরতে পারবে।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি