তন্ত্র পঞ্চক

সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য 

প্রচ্ছদ :- শুভদীপ ব্যানার্জী 

বিষয় :- তন্ত্র মন্ত্র  

বইয়ের বিষয়বস্তু :- 

কলকাতার বইয়ের দোকানে যখন শত শত ভৌতিক বইয়ের ভিড়, তখন কিছু ব্যতিক্রমী লেখা আপনার শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত বইয়ে দেয়, যা কেবল রাতের ঘুম কেড়ে নেয় না, দিনের আলোতেও এক অদ্ভুত অস্থিরতা তৈরি করে। সঞ্চারী ভট্টাচার্য-এর 'তন্ত্র পঞ্চক', একতারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এমনই এক সংকলন, যেখানে তন্ত্র ও তান্ত্রিক বিষয় নিয়ে লেখা পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন, হাড়হিম করা গল্প আপনাকে এক অন্য জগতে টেনে নিয়ে যাবে। এটি নিছকই ভৌতিক গল্প নয়; এ যেন গুপ্ত সাধনার এক অন্ধকার জগতে প্রবেশের এক নিষিদ্ধ আমন্ত্রণপত্র, যেখানে প্রতিটি পাতা উল্টালেই মনে হবে বুঝি কোনো প্রাচীন রহস্যের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এই বই একবার হাতে নিলে আর পালানোর পথ পাবেন না, কারণ এর প্রতিটি গল্প আপনার মনস্তত্ত্বের গভীরে এমনভাবে শেকড় গাড়বে যে, ভয় আপনার পিছু ছাড়বে না।

'তন্ত্র পঞ্চক' – নামটাই জানান দেয় এর বিষয়বস্তুর গভীরতা এবং রহস্যময়তা। তন্ত্র, এক প্রাচীন, শক্তিশালী এবং প্রায়শই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা বিদ্যা, যা লোকচক্ষুর আড়ালে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চর্চিত হয়ে আসছে। এই বইয়ের প্রতিটি গল্প সেই গুপ্ত জগতের এক ঝলক দেখায়, যেখানে সাধারণ যুক্তি, বিজ্ঞান আর মানবিকতা পরাস্ত হয় এবং অলৌকিকতা এক নির্মম বাস্তব হয়ে ওঠে। সঞ্চারী ভট্টাচার্যের লেখনী এতটাই শক্তিশালী ও তীক্ষ্ণ যে, তিনি খুব সাবধানে, কিন্তু নির্মমভাবে আপনাকে সেই অন্ধকার গলিপথে টেনে নিয়ে যাবেন, যেখানে তন্ত্রের রীতিনীতি, মন্ত্রের শক্তি আর অতৃপ্ত আত্মার দীর্ঘশ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।বইটির প্রথম গল্পেই আপনি এক হিমশীতল অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন। লেখক তন্ত্রের এমন কিছু দিকের ওপর আলো ফেলেছেন, যা সাধারণত লোককথা বা চাপা গুঞ্জনেই সীমাবদ্ধ থাকে, যা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা নিষিদ্ধ। এখানে রক্ত, মাংস, শ্মশান আর অর্ধদগ্ধ চিতার ছাই কেবল প্রতীক নয়, বরং গা ছমছম করা এক ভয়ংকর বাস্তবতা। লেখক এমন এক পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে আপনি কল্পনা করতে বাধ্য হবেন, গভীর রাতে কোনো তান্ত্রিকের সাধনক্ষেত্রে বসে আছেন, যেখানে শঙ্খধ্বনি আর মন্ত্রের গুরুগম্ভীর উচ্চারণে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে, আর আপনার আশেপাশে এমন কিছু ঘটছে যা স্বাভাবিক পৃথিবীর নিয়মের বাইরে।

ভয় এখানে কেবল অশরীরীর নয়, ভয় আসে মানুষের ভেতরের সেই আদিম পাশবিকতা থেকে, যা তন্ত্রের আবরণে আরও ভয়ংকর ও কদর্য হয়ে ওঠে।দ্বিতীয় গল্পটি আপনাকে এক তীব্র মানসিক দ্বন্দ্বে ফেলে দেবে। কী বাস্তব আর কী বিভ্রম, সেই সূক্ষ্ম সীমারেখা এখানে প্রায় মুছে যায়। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য আপনাকে এক তীব্র অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে, যেখানে আপনার নিজস্ব বোধশক্তি প্রশ্নের মুখে পড়বে। তন্ত্রের কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া, যা মানুষের মনকে বিকৃত করতে পারে বা অশুভ শক্তিকে আহ্বান করতে পারে, তার এক জীবন্ত, গ্রাফিক চিত্র পাবেন এখানে। এই গল্পটি পড়ার সময় আপনার মনে হতে পারে, কেউ যেন আপনার কাঁধে হাত রেখেছে, অথবা ঘরের কোনো অন্ধকার কোণ থেকে কেউ আপনাকে স্থির দৃষ্টিতে দেখছে। অবিশ্বাস আর শঙ্কার এক অদ্ভুত মিশ্রণ আপনার মনকে আচ্ছন্ন করবে। 

এরপরের গল্পগুলো আপনাকে আরও গভীরে নিয়ে যাবে তন্ত্রের কালো জগতের। এখানে শুধু শ্মশানের পটভূমি নয়, শহরের আধুনিক ফ্ল্যাট বা পুরোনো জমিদার বাড়ির অন্দরেও প্রবেশ করেছে তন্ত্রের অভিশাপ। আপনি জানতে পারবেন, কীভাবে সামান্য লোভ বা অসতর্কতা কীভাবে জীবনকে এক ভয়ংকর, অতলস্পর্শী পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়, যখন আপনি তন্ত্রের নিষিদ্ধ পথে পা বাড়ান। এই বইয়ের চরিত্রগুলো এতই বাস্তব যে, তাদের দুর্দশা আর আতঙ্ক আপনার নিজের মনেও ছায়া ফেলবে, আপনার হৃদয়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দেবে। 

তাদের অসহায়তা আপনার ভেতরের ভয়কে আরও উসকে দেবে, আপনি অনুভব করবেন তাদের যন্ত্রণা।'তন্ত্র পঞ্চক' কেবল কয়েকটি ভৌতিক কাহিনি নয়, এটি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস, সীমাহীন লোভ আর গভীর অজ্ঞতার এক কদর্য চিত্র। লেখক অত্যন্ত নিপুণভাবে মানুষের দুর্বলতাগুলোকে তন্ত্রের ভয়াবহতার সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন, যা পাঠককে এক অন্যরকম, কিন্তু গভীর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করাবে। বইটির ভাষা সরল হলেও এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর এবং সুদূরপ্রসারী। সঞ্চারী ভট্টাচার্য গল্পের প্রতিটি বাঁকে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত মোড় রেখেছেন, যা আপনাকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা ধরে রাখবে। প্রতিটি গল্প শেষ হওয়ার পর মনে হবে, যেন বুকের ওপর এক বিশাল পাথর চেপে আছে, আর আপনি গভীর শ্বাস নিতে পারছেন না। এক দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তি আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। 

আপনি যদি এমন বই খুঁজছেন যা আপনাকে কেবল ক্ষণিকের জন্য ভীত করবে না, বরং আপনার মনোজগতে এক দীর্ঘস্থায়ী, হিমশীতল ছাপ ফেলে যাবে, যা আপনাকে রাতের পর রাত নির্ঘুম রাখবে, আর দিনের বেলাতেও আপনার চারপাশে কোনো অদৃশ্য উপস্থিতি অনুভব করাবে, তাহলে 'তন্ত্র পঞ্চক' আপনার জন্য অবশ্যপাঠ্য। এটি সেই বই, যা পড়ার পর আপনার তন্ত্র সম্পর্কে ধারণাই বদলে যাবে, আর রাতের অন্ধকার আপনার জন্য হয়ে উঠবে আরও ভয়ংকর, আরও রহস্যময়। 

সতর্ক বার্তা :  একবার এই তন্ত্রের জগতে প্রবেশ করলে, সে জগৎ থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসা কঠিন হতে পারে! আপনি কি প্রস্তুত এই ভয়ঙ্কর যাত্রার জন্য?