উজান গাঙ বাইয়া
হেমাঙ্গ বিশ্বাস
সম্পাদনা : মৈনাক বিশ্বাস
গত শতকের তিরিশের দশকে শুরু হওয়া ভারতের প্রথম সংগঠিত গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। শুধু শিল্পী নন, ছিলেন ওই আন্দোলনের তাত্ত্বিক ও সংগঠক। এই বইতে তাঁর স্মৃতিচারণ, সাক্ষাৎকার, নিবন্ধ, চিঠি ও ছবিতে ধরা আছে তিরিশ থেকে পঞ্চাশের দশকের সাংস্কৃতিক যুগান্তরের, শিল্প-সৃষ্টি ও সমাজ-বিপ্লবের যৌথ উদ্যোগের দিনলিপি। সেই সঙ্গে এসেছে পরবর্তী তিন দশকের মানচিত্র, কারণ এইসব লেখার একটা বড় অংশ ১৯৭০-৮০-র প্রেক্ষিত থেকে রচিত- উত্তরাধিকারের খতিয়ান রয়েছে তাতে, এবং সমকালের সংকট ও সম্ভাবনা বিষয়ে ভাবনা রয়েছে। লেখকের ব্যক্তিজীবন এখানে জড়িয়ে গেছে সামূহিক বৃহৎ এক জীবনে, যে বৃহৎ জীবনে শেষ দিন অবধি তিনি আস্থা হারাননি। ছোটোবেলায় দেখা খেটে-খাওয়া দরিদ্র শিল্পীদের প্রতিভার মুগ্ধ বিবরণে এই বই-এর শুরু। বই-এর শেষে এসে দেখা যাবে ওই প্রতিভা আর শ্রমের মুক্তিই তাঁর সারা জীবন লালন-করা সহজ-ধারার মূল অভীষ্ট।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের শৈশব থেকে প্রথম যৌবনের দিনগুলির স্মৃতিচারণ দিয়ে শুরু হয়েছে এই বই। তারপর নানা প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে ধরা রয়েছে প্রগতি সাহিত্য ও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলন তথা সুরমা উপত্যকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ, বাংলা ও আসামের গণনাট্য আন্দোলনের নির্মোহ বিশ্লেষণ, এবং নিজের সৃষ্টিকর্মের খতিয়ান। সেই সঙ্গে রয়েছে কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক অসমাপ্ত, নিবিড় ইতিহাস। সতীর্থদের উপর রচনায়, চিঠিপত্র আর ছবিতে আমাদের বিশ শতকের জনজাগরণ ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসাধারণ এক জীবনযাপনের গল্প। নানা ত্রুটি সংশোধন করে এবং নতুন ছবি ও টীকা সংযোজন করে প্রকাশ করা হল এই তৃতীয় সংস্করণ।
লেখক পরিচিতি :
হেমাঙ্গ বিশ্বাস (১৯১২-৮৭) বাংলা ও আসামের গণসংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম নেতা, সঙ্গীতকার ও গায়ক। গণসঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত রচয়িতা ও বিশ্লেষক হিসেবে তাঁর মূল পরিচিতি; 'মাউন্টব্যাটন মঙ্গলকাব্য', 'বাঁচবো বাঁচবো রে আমরা', 'ঢাকার ডাক', 'শঙ্খচিল', 'কল্লোল', 'জন হেনরি' ইত্যাদি সবচেয়ে জনপ্রিয় সৃষ্টি। 'সুরমা ভ্যালি কালচারাল স্কোয়াড' ও 'আসাম গণনাট্য সঙ্ঘ' তৈরি করেছিলেন, তেলেঙ্গানা-পরবর্তী গণনাট্যের বিপ্লবী সাংস্কৃতিক লাইনের মূল প্রস্তাবক ছিলেন। ১৯৩৭-৩৮ থেকে ১৯৬৪ সালে বিভাজনের সময় পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। পরবর্তীকালে গানের দল 'মাস সিঙ্গার্স', 'ডা. কোটনিস মেমোরিয়াল কমিটি' ও 'ভারত-চীন মৈত্রী সমিতি'-র নেতৃত্ব দেন। প্রকাশিত বই-এর মধ্যে রয়েছে 'বিষাণ' (১৯৪৩), 'সীমান্ত প্রহরী' (১৯৬১, ২০০৮), 'কুলখুড়ার চোতাল' (১৯৭১, অসমীয়া), 'আকৌ চিন চাই আহিলোঁ' (দুই খণ্ড ১৯৭৫ ও ১৯৭৭, অসমীয়া), 'আবার চীন দেখে এলাম' (১৯৭৫), 'লোকসঙ্গীত সমীক্ষাঃ বাংলা ও আসাম' (১৯৭৮), 'হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান' (১৯৮০)। মৃত্যুর পরে প্রকাশিত 'গানের বাহিরানা' (১৯৯৮), অসমীয়া রচনা সংকলন 'হেমাঙ্গ বিশ্বাস রচনাবলী' (২০০৮), 'উজান গাঙ বাইয়া' (১৯৯০, ২০১২) এবং 'হেমাঙ্গ বিশ্বাস রচনাসংগ্রহ-১' (২০১২)।
প্রকাশকের কথা :
'এই অধঃপতিত সময়, যখন ইছে করে মুছে দেওয়া হচ্ছে আমাদের গর্বের ইতিহাস, ইতিহাসনায়কদের কথা, তখন বল-ভরসার জন্য ফিরে পড়তে হয় এমন জীবনকথা, যা বেপুথ সমাজকে দিশা দেয় নতুন কালের, নতুন স্বপ্নের। এই অসময়ে অবশ্য পাঠ্য এই বই আমাদের সারস্বতচর্চার গর্বিত প্রকাশ'।-অনুষ্টুপ
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.