প্রচ্ছদ - নচিকেতা মাহাতো
বর্ণশুদ্ধি - তন্ময় সরকার
নামাঙ্কন - রাজীব বিশ্বাস
মহাভারত বলতে যাঁরা কুরুপাণ্ডবকথা মাত্র বোঝেন, এ-কাহিনি তাঁদের কাছে হয়তো কিঞ্চিৎ কমই জানা। প্রকৃত প্রস্তাবে, এ-আখ্যান ভারত-বৃত্তান্তের উৎসমুখ থেকে খনন করে আনে কুরুকাহিনির আদিতম লগ্নের একটি খণ্ড। দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের দুহিতা দেবযানীর জীবনের যে-সমস্ত উত্থানপতন বহু প্রজন্ম পরে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস প্রসব করবে- এই আখ্যানে সেই আবেগধৌত ও সংঘাতমুখর প্রারম্ভ-ঘটনামালা বিধৃত। লেখকের মহাভারত-নির্ভর আখ্যানগুলি চেনা গল্পের মধ্যেই অচেনা ব্যঞ্জনা আনে। উদ্ভাবনী কল্পনা আর যৌক্তিক পরিপূরণের মাধ্যমে তারা নিয়ে আসে অনাস্বাদিতপূর্বের স্পর্শ। অভিজাত বিষয়বস্তুর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ধ্বনিঝংকৃত ভাষা- এই মণিকাঞ্চনযোগ 'যুগ-সম্ভাবিনী' উপন্যাসেও স্বমহিমায় ভাস্বর।
------------------
পিতার নাম কাউকে বলা বারণ! কেন?
বহুকাল নিজেদের সংযত রেখেছিল তারা। কিন্তু কালের লিখন খণ্ডায় কে? একদিন, যখন বাল্য-কৈশোর প্রায় অতিক্রম ক’রে ফেলেছে--- এমন সময়ে এক শান্ত বসন্ত-অপরাহ্ণে এক বিপুল অশান্তি-অনর্থ তারা ঘটিয়েই ফেলল।
দেবযানীর দুই পুত্র যদু ও তুর্বসুর সঙ্গে উপবনে ক্রীড়া করছিল শর্মিষ্ঠার তিন নন্দন। অদূরে উপবিষ্ট ও আলাপনরত রাজা ও রানি। খেলতে খেলতে এক ক্ষুদ্র কলহের সৃষ্টি হল। তর্কাতর্কিতে একসময় সদ্য-যুবক যদু সাহঙ্কারে বলল, “আরে, দূর! কী বিক্রম দেখাস রে অসুরাণীর সন্তান পুরু! আমার পিতা রাজা, আমি রাজপুত্র! ওই দ্যাখ যিনি বসে রয়েছেন, মহান যযাতি--- উনি আমাদের দুজনের জনক, আমার আর তুর্বসুর! তোদের পিতা কে, তা-ই তো অজ্ঞাত! বেশি বাক্য বলিস না!”
কনিষ্ঠ কিশোর পুরু বক্ষ স্ফীত ক’রে বলে বসল, “কী গর্ব করিস! আরে, উনি আমারও পিতা! আমাদের এই তিনজনেরও পিতা, উনিই--- রাজা যযাতি। আমরাও রাজপুত্র! তুই জানিস না, সেটা অন্য কথা!”
ক্রুদ্ধ তরুণ তুর্বসু বলে, “বামনের চন্দ্রাভিলাষ! নীচ রক্তের সন্তান রাজা যযাতিকে পিতা বলে, মূর্খ! রাজার কানে গেলে তোর জিহ্বাচ্ছেদ হবে রে অধম!”
শর্মিষ্ঠার তিন পুত্র আর সহ্য করতে পারে না। তৎক্ষণাৎ ধাবিত হয় অদূরে উপবিষ্ট রাজার কাছে! দেবযানীর সামনেই তারা কেউ যযাতির জানু কেউ কটি জড়িয়ে ধরে ক্ষুব্ধস্বরে ও ক্রন্দনোন্মুখ হয়ে বলতে থাকে, “পিতা, আপনি ওদের জানিয়ে দিন যে আপনিই আমাদের প্রকৃত পিতা... আমরাও রাজপুত্র... বলুন ওদের...”
বজ্রাহতা দেবযানী আরও শুনতে পান, তারা কাতরে বলছে, “গোপনে আমাদের মাতার সাক্ষাতে এসে তো কত মিষ্টবাক্য বলেন, পিতা! এই যে, এই স্বর্ণহার এই অঙ্গদগুলি তো এই সেদিনই আমাদের উপহার দিলেন... কিন্তু সবার সামনে আপনি কেন আমাদের অবহেলা করেন, তাত?”
দেবযানীর চক্ষু যেন পাথর, শ্রবণে যেন অগ্নিশলাকা প্রবিষ্ট!
“ওই যদু-তুর্বসুরা আমাদের অপমান করছে, নীচ-জাত বলছে, ওদের শাসন করুন পিতা... বলে দিন আমরাও রাজপুত্র, রাজা যযাতির পুত্র দ্রুহ্যু অনু আর পুরু... আপনি তো সত্য জানেন, বলুন না পিতা...”
যযাতিও বাক্শূন্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
দেবযানী নিষ্পলক চোখেই দেখলেন, রাজার ওষ্ঠ শুকিয়ে এসেছে, মুখ নীরক্ত, হাতের তালু কম্পমান।...
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.