অদৃশ্য আনন্দমঠ ও রহস্যময় সাধক সাধিকারা
সোমব্রত সরকার
--------------------------
বইয়ের অংশ :
চৈত্র সংক্রান্তিতে পড়ে বারুণী স্নানের তিথি। মহাপীঠ তারাপীঠের অনেক সাধু - মোহান্ত, তান্ত্রিক - ভৈরব, যোগিপুরুষেরা আসেন এই স্নান উপলক্ষেই।
বারুণী কথার মানে পশ্চিম দিক। তারাপীঠের সাধুসন্তেরা বারুণী স্নানটা করেন কাশীধামের বিশ্বনাথকে লক্ষ্য করে।
কাশী তারাপীঠের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সেখানকার গঙ্গার উত্তর দিকে রয়েছে বরুণা নদী আর দক্ষিণে অসি নদী। এই দুই নদীনামের একত্র সংযোগে বারাণসীর অস্তিত্ব, এমন একটা মত রয়েছে।
তারাপীঠে সাধুসন্তেরা বারুণী স্নানে এসে দ্বারকা নদীতে তিনখানি ডুব লাগান। প্রথম ডুব বরুণা নদীর নামে। দ্বিতীয় ডুব অসি নদীর স্মরণে। তৃতীয় ডুবখানি তাঁরা দেন কাশীর গঙ্গাকে মনে রেখে।
সাধক তান্ত্রিকেরা বলেন, “তারাপীঠের দ্বারকা নদীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে কাশীধামের গঙ্গা নদীর।“
আমি তান্ত্রিকগুরুকে প্রশ্ন করি, “কী এই সংযোগ?”
দীর্ঘদেহী জটাধারী বাবা বলেন, “দ্বারকার সঙ্গে মা গঙ্গার সোজাসুজি যোগ লাই রে বেটা।”
বলি, “তবে?”
তান্ত্রিকগুরু বলেন, “তারাপীঠের দ্বারকা নদীতে একদিন এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে এই যোগ ঘটে।”
— যে বচ্ছর কার্তিক মাসে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর চতুর্দশী লাগে সেই দিনকার ব্রাহ্ম মুহূর্তে এই স্নানের যোগ। বচ্ছর বচ্ছর এই যোগ আসে না রে বেটা।
“বচ্ছরকার বারুণী যোগে পুর্ণ্যার্থীরা স্নানে আসেন। সাধকেরা চেয়ে থাকেন নিদিষ্ট তিথিযোগের দিকে।”
তেমনই এক যোগে গিয়ে পৌঁছাই মুণ্ডমালিনী তলাতে। দ্বারকার এই মুণ্ডমালিনী তলাতে তারা মা নিজের গলার মুণ্ডমালা খুলে রেখে স্নান সারেন ব্রাহ্ম মুহূর্তে। এমনই বিশ্বাস আছে তান্ত্রিকদের।
মুণ্ডমালিনী তলাকে বলা হয়, তারা মায়ের স্নানের ঘাট। ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এক সময় সাধনা করেছিলেন ছোট বাবা।
বাবার মন্ত্রশিষ্যা কৃষ্ণা মা বলছিলেন আমায় পুরোনো সময়ের কথা, “বামদেব আসতেন এখানে মহাশ্মশান থেকে উঠে। তাঁর অনেক শিষ্যদের তিনি এখানকার শ্মশানে সাধনা করতেও পাঠাতেন।”
— বশিষ্ঠদেব তারাপীঠ মহাশ্মশানে এলেন। তপস্যারত অবস্থায় একদিন এ জায়গাটিতেই তিনি মুণ্ডমালা কুড়িয়ে পেলেন।
— এমন সব কিংবদন্তি লেগে এই জায়গা নিয়ে।
“ছোটবাবা নদীকুঞ্জে সাধন করার উপর জোর দিতেন।”
জিজ্ঞাসা করলাম, “নদীকুঞ্জ কী? আর এই সাধনাই বা কেমন?“
কৃষ্ণা মা বললেন, “দ্বারকার পাড়কে বলা হয় নদীকুঞ্জ।”
— কুঞ্জসাধনে গুরু, ইষ্ট, পরমাত্মার কাছে শরণাগত ভাবে বসতে হয় ব্রাহ্ম মুহূর্তে।
— ওই মুহূর্তে করতে হয় অভ্যাসযোগ।
— দ্বারকার পাড়ে বসে ওই সময় কুম্ভক করে মনকে আত্মাতে যুক্ত করতে পারলে পরমাত্মার সঙ্গে সমাযোগের একটা সমাধি দশা চলে আসে সাধক তান্ত্রিকের মধ্যে।
— এই দশার সাধন করতে করতেই নির্বিকল্প সাধনাটা ধীরে ধীরে হয়ে যায়।”
“তবে বাবা, গুরু ছাড়া এই নদীকুঞ্জের সাধনা কখনও সম্ভবপর নয়।”
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি