বঙ্গের অনন্ত-সামন্তচক্র ও ইসলাম রাষ্ট্রের ইতিহাস
ধনঞ্জয় দাশ মজুমদার
লোকে ভূতের গল্প লেখে বলে ভূত সত্যি হয়ে যায় না অথবা না লিখলে ভূতে বিশ্বাসও নির্মূল হয় না— ঈশ্বরের মতোই। তাই যদি কোন তথাকথিত ইতিহাসের মতো কোনো বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়, বিশেষত তা যদি প্রচলিত মতের বিরুদ্ধাচরণ করে তাহলে সেটিকে ভাবিকালের জন্য রক্ষা করা কর্তব্য—সত্য-মিথ্যা বিচারের ভার অনন্ত ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। প্রতি যুগে ঘটনার বিবরণের নতুন ইন্টারপ্রিটেশন বা তথ্যের সংযোগসাধনকে কার্যত ইতিহাস নাম দেওয়া হয়েছে।
তাই এই ‘ইতিহাস’-এর এই পুনর্মুদ্রণ ধর্মীয় ও জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট মনে হলেও সংরক্ষণ জরুরী কারণ এটি প্রচলিত ইতিহাসের গল্পে প্রচুর ফাঁকফোকর তুলে ধরতে সক্ষম। বইটি খুব বেশি দিন আগের নয়, প্রথম প্রকাশ ১৯৬৭ সালে। সেই সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সংবাদপত্রে যথেষ্ট প্রশংসিত—
১৩৭৪ সালের ৯ই চৈত্রের দেশ পত্রিকা বলেন—
আলোচ্য গ্রন্থখানি প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলার আর্য আগমনের পরবর্তীকাল হইতে ইংরেজ শাসনের প্রাথমিক যুগ পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস। ইতিহাসের প্রতিটি স্তর লেখক সুবিস্তৃত তথ্যযোগে এবং সুনিপুণ বিশ্লেষণের সাহায্যে বিবৃত করেছেন। বৈদিকযুগে বাংলার আর্যদের বসতি স্থাপন, বক্তিয়ার খিলজীর আগমন, মুসলমানবিজয়, পাঠান রাজন্যবর্গ, হোসেন শাহের রাজত্বকালে বাংলার সমৃদ্ধি, পাঠান রাজত্বের শেষ পর্যায়ে রাঢ়ের অনন্ত সামন্তচক্রের ইতিহাস, মোঘল আক্রমণ এবং সামন্তচক্রের ইতিহাস, মোঘল আক্রমণ এবং বার ভূঁইয়ার পরিচয়, সমবঙ্গের ইতিহাস, মুর্শিদকুলী খাঁর বঙ্গবিজয়, ইংরাজ, পাঠান সংঘর্ষ, এবং বাংলায় ইংরাজ আক্রমণের প্রাথমিক যুগ ইত্যাদি লেখক বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণের বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় বিকৃত তথ্য পরিবেশন বিষয়ে লেখক যে সমস্ত প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলার ইতিহাস রচনায় লেখকের দৃষ্টিভঙ্গীর একটি বিশেষ দিক প্রশংসার দাবী রাখে। সাধারণতঃ প্রচলিত ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বাংলার ইতিহাসকে ম্লান করে দেখাবার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। লেখক বিভিন্ন তথ্যের উপস্থাপনা করে বাংলার ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল দিকটিকে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছেন। এই শ্রমসাধ্য গ্রন্থখানির জন্য লেখক আমাদের প্রশংসা দাবী করতে পারেন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি