দুই মলাটের দুনিয়া

(0 পর্যালোচনা)

লিখেছেন:
অভীক দত্ত

দাম:
₹270.00

সংস্করণ:
পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

অষ্টাদশী বধূটি পোর্টম্যান্টোতে লুকিয়ে ওপার থেকে এপারে নিয়ে এসেছিল একখানি ছেঁড়াখোঁড়া কাশীদাসি মহাভারত। উদ্ভ্রান্ত, বিপর্যস্ত, উদাসীন স্বামীটি শেষবারের মতো ভিটের চারধারে ঘুরে প্রণাম করতে করতে দেখে ফেলেছিল বউয়ের কাণ্ড। ওই লাল কাপড়ে বাঁধাই বই যার মলাটের অনেকটা উইতে খেয়েছে, ছেলেটির মায়ের সম্পত্তি ছিল। সারা জীবন আগলে আগলে রেখে মৃত্যুর আগে বইটি তিনি পুত্রবধূর হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছেন।

     ছেলেটি তুলসীবেদির সামনে এসে দাঁড়ায়। হাত জোড় করে মাথায় ঠেকায় একবার। ভোরের আলো ফুটছে। কাঁটাতার পেরিয়ে যাওয়ার সময় এল।

     বধূটি বইটিকে আগলে রাখে। আট মাসের পোয়াতি সে। একটু দুধ-মাখন পেলে ভালো হয়। এপারে আসার পর ওসবের চেহারা ভুলতে বসেছে প্রায়। বরাবরের উদাসীন স্বামীটি অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে একটি স্কুলে শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিল। এসব কাজে ধরাধরি লাগে। এই সময় ওপার থেকে মানুষ আসার কমতি নেই। জমিজমা-গরুবাছুর ফেলে সব পালাচ্ছে। এপারে কাজের বড়ো আকাল। বড্ডো ধরাধরি করতে হয়। মুখচোরা স্বামীটি তার কথা বলতে ঘাবড়ায়, ভিড়ভাট্টায় ভয়। এই স্কুলের চাকরিটা বড়ো কষ্টে হয়েছিল। কিন্তু কপালে যে তার কী শনি! চোখের অসুখ বাধিয়ে বসলেন উনি। চাকরিটা যাবে এইবার। দুধটুকু ওঁর জন্যেই তোলা থাক।

     সন্ধে দিয়ে ঘুপচি অপ্রশস্ত ঘরের মেঝেতে মহাভারত খুলে বসে বউটি। পিদ্দিম উস্কে পড়তে থাকে। ঘরের পাশে বাড়ির মালিকের গোয়াল। সাঁঝালের ধোঁয়া ভেসে আসে। চোখের জল সামলে বধূটি পড়ে,


                “হরিনাম সর্ব্বশাস্ত্র বীজ দ্বিঅক্ষর।

                অন্তনাহি, আদি নাহি, বেদে অগোচর॥”


পেটেরটা ভারী দস্যি হয়েছে। খুবজোর লাথি ছোড়ে। দূরে আচায্যিবাড়ির শঙ্খের আওয়াজ। বধূটি কপালে হাত ঠেকায়, মনে মনে বলে, “মা ষষ্ঠী দয়া কোরো মাগো, ছেলে দিয়ো একটা।”

      ছেলেই হয়েছিল। ছোট্টটি থেকেই মায়ের কাছে কাশীদাসের পয়ার শুনতে শুনতে তার ঘোর লাগে। বাবা কাশীদাস পছন্দ করেন না। তাঁর পছন্দ কালীসিংহি। চোখ খারাপ হতে হতে তিনি এখন অন্ধ প্রায়। স্কুলের চাকরিটি গেছে। সকাল বিকাল দু’-একটি ছেলে আসে, পড়তে। পুরনো দিনের আইএ পাস মানুষ, অঙ্ক-ইংরেজিটা ভালোই পড়ান।

     পুত্রটি সকালে স্কুলে যায়, বিকেলে এসে মা আর ছোটোদু’টি ভাইবোনের সঙ্গে কাগজের ঠোঙা বানাতে হাত লাগায়। হ্যাঁ, এর মধ্যে আরও দু’টি সন্তান জন্মেছে ওই ঘরে। সন্ধ্যায় বড়োছেলেটি যখন স্কুলের পড়া নিয়ে বসেছে সবে, ছোটোদু’টি ঘুমন্ত, সন্ধ্যা দিয়ে গৃহিণী পড়ছেন কাশীদাস, গুনগুন শোনা যাচ্ছে— কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান— দাওয়া থেকে দৃষ্টিহীন প্রৌঢ় গজগজ করতে থাকেন— “যতসব মেয়েলি পয়ার। কালীসিংহির কী ওজস্বী লেখা!”

     বড়োছেলেটি এই সময় মুগ্ধ হয়ে শুনত বাবা স্মৃতি থেকে নির্ভুল উচ্চারণ করছেন— “হে পার্থ, তুমি মুহূর্তকাল যুদ্ধে নিবৃত্ত হও। আমি মহীতল হইতে রথচক্র উদ্ধার করিতেছি। দৈববশতঃ আমার দক্ষিণ রথচক্র পৃথিবীতে প্রোথিত হইয়াছে। এসময় তুমি কাপুরুষোচিত দুরভিসন্ধি পরিত্যাগ করো।” এই সময় ভাইবোন দু’জনে উঠে পড়ায় বালকটি জানতে পারল না, নিমীলিত চোখের আড়াল থেকে গড়িয়ে যাওয়া অশ্রু তখন তার পিতার গাল ভিজিয়ে দিচ্ছে। তিনি মাঝে মাঝেই গুঙিয়ে উঠছেন প্রায় অস্ফুটে— “চাকা বসে গেছে মাটিতে, হা ঈশ্বর, অভিশাপ লেগেছে, ব্রহ্মশাপ।

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat   |   © All rights reserved 2023.