নিষাদ
পিয়া সরকার
প্রচ্ছদচিত্র ও অঙ্গসজ্জা : সুবিনয় দাস
দু'টি পরপর খুন। আপাতভাবে সরল সমাধান। তদন্তে নেমে এস আই দর্শনা বোস আবিষ্কার করেন, যা সহজ, তা সত্য নয়।
সাধারণ জীবনযাপনের আড়ালে ওঁত পেতে আছে অবিশ্বাস, প্রতারণা ও অপরাধের ধূসর জগৎ। সামনে আসে তিরিশ বছরের পুরোনো এক অমীমাংসিত কেস, বীভৎসতায় যা কুঁকড়ে দেয় সমস্ত মানবিক মূল্যবোধকে। চরম ধূর্ত প্রতিপক্ষকে বুঝে নিতে নিতে দর্শনা মুখোমুখি হন এমন এক সত্যের, যার জন্য তিনি নিজেও প্রস্তুত ছিলেন না।
নিষাদ, শুধু গতিময় আর রুদ্ধশ্বাস অপরাধকাহিনী নয়— এটি আসলে একটি প্রশ্নচিহ্ন। অপরাধ না অপরাধী, কে বেশি ঘৃণ্য?
এস আই দর্শনা বোস সিরিজের তৃতীয় উপন্যাস ও দ্বিতীয় গ্রন্থ নিষাদ। এবারের প্রেক্ষাপট পুরুলিয়া ও কলকাতা। চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠা শহুরে অপরাধকাহিনির আড়ালে নিষাদ আসলে এক মানবিক গল্প।
-------------------------------------
আর্মেনিয়ান ঘাটের দিকে ফেরি গড়াতে শুরু করলে কলকাতার বাতাস গঙ্গা উজিয়ে বয়ে আসে। প্রায় শতাব্দী গড়াতে চলল, পুরোনো হাওড়া ব্রিজ তার মহানাগরিক সত্ত্বাটি নিয়ে পতিতউদ্ধারিণীর সাগরযাত্রার সাক্ষী। নতুনটির চেহারায় পুরোনোটির মতো জীর্ণ অথচ অভিজ্ঞ ছাপ নেই। এই দুপুরেও, মল্লিকঘাট আর মতি শীলের ঘাটে মানুষের ঢল নেমেছে। আজ তিন তারিখ। ছুটির দিন। তাই ঘাটের কাছে অহরহ গল্প বলে চলেছে নদীর জল। মা বলত, কীর্তিবাস কলকাতা।
যখন পুলিশ হব ঠিক করিনি, তখন ভেবেছিলাম ভূ-পর্যটক হব। 'সহজ পাঠ'-এ লেখা অক্ষর চোখের সামনে ভেসে উঠত- 'আর্মানি গির্জের কাছে আপিস। যাওয়া মুশকিল হবে। পূর্ব দিকের মেঘ ইস্পাতের মতো কালো।' লর্ড ক্যানিং নামাঙ্কিত বিরাট গুদামের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুনতে চেষ্টা করতাম আর্মানি গির্জার ঘণ্টা। কলকাতা শহরের ধনী আর্মেনিয়ান সুকিয়াসের বিবি রেজারীবেহ সুকিয়াস শুয়ে আছেন এরই কাছাকাছি অঞ্চলে। তাঁর কবর ছুঁয়ে গির্জার ঘণ্টার শব্দ গঙ্গার জলে যে ঢেউ তুলত, স্ট্যান্ড রোডের কোলাহলে সেই তরঙ্গদোল পৌনে এক শতাব্দী আগে বিদায় নিয়েছে। গঙ্গার জলের ঢেউ এখন শুধু জোয়ারের সময় দৃশ্যমান।
চড়া রোদ, আর তার মাঝে মাঝে বসন্তকালীন হাওয়ার হালকা পায়ের টহল--- ইস্পাতধূসর রাস্তায় সাদা নীল ছুপানো রেলিং, কচিৎ-কদাচিৎ দৃশ্যমান প্রায় বিরল হলদে রঙের চারচাকা আর উঁচুতে তাকালে দু'সারি সমান্তরাল অট্টালিকাদের মাথা ছুঁয়ে, দইয়ের ঘোলের মতো সাদা আকাশ। যেন ফেসবুক রিল দেখছি কোনও। লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের সামনে চায়ের দোকানের নাম ভাঁড়ে মা ভবানী। মালিক রসিক মানুষ। ভাঁড়ে চা দিয়ে বললেন, "ভালো সিগারেট আছে।” চা-সিগারেট ক্ষুধানিবৃত্তি করে। বিজন একবারে ফোন তুলেছিলেন। কেজো গলায় আসছি জানিয়ে, মিনিট দশেক পরে, হলদে নয়, সাদা ট্যাক্সিতে চেপে বললাম, "লালবাজার"।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি