ফুলগুলো সরিয়ে নাও (১)
সমীরণ দাস
গলার নলি বেরিয়ে এসেছে। ঢোক চিপলে সেই নলি উঠে যাচ্ছে ভিতরে আবার পর মুহূর্তেই বেরিয়ে এসে ঝুলে পড়ছে। কণ্ঠার হাড় দুটো ছোটোবেলায় খেলা ডাংগুলির ডাং-এর মতো স্পষ্ট। চোখদুটি কোটরে ঢোকা। কী বিশ্রী যে দেখাচ্ছে! মানিকের ক্ষোভ জাগে নিজের শরীরের উপর, এই সবই আমার অতিরিক্ত মদ্যপানের ফল। প্রশ্ন জাগল, জীবনের মূল্য বেশি না মদের মূল্য? জীবন, জগত, মানুষ ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কেও নানা প্রশ্ন জাগে। ডায়ারিতে লিখলেন, আমরা নিয়মের সূত্রে বাঁধা। মূল নিয়ম জানার জন্য ১ শুদ্ধ বুদ্ধি দিয়ে জানা নয়, জীবন দিয়ে জানা। আমরা ক্রমাগত নিয়মের শাখাপ্রশাখাই জেনে এসেছি এবং চিরকাল তাই আমাদের করে যেতে হবে। এরই নাম প্রগতি। সমস্ত ধর্ম আর মতবাদের ভিত্তিও এই। সৃষ্টি রহস্য। বিশ্বের মূলনীতি কোনোদিন জানা সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। সে জ্ঞান অনন্ত ও সীমাহীন।
'ফুলগুলো সরিয়ে নাও' কেবলমাত্র মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হয়ে ওঠার ইতিবৃত্ত নয়, এই উপন্যাসে ওতপ্রোতভাবে ধরা পড়েছে সেই সময়ের সাহিত্য, সমাজনীতি, রাজনীতি, দুর্ভিক্ষ, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, দেশভাগ ও তেভাগা আন্দোলনের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলিও।