নিঃসঙ্গ ঈশ্বর

(0 পর্যালোচনা)
লিখেছেন/সম্পাদনা করেছেন
সমীরণ দাস

মূল্য
₹440.00
ক্লাব পয়েন্ট: 20
সংস্করণ
পরিমাণ
মোট দাম
শেয়ার করুন
নিঃসঙ্গ ঈশ্বর 

(ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস )

সমীরণ দাস 

বিদ্যাসাগরের শেষ কুড়ি বছর ছিল দুঃখময়। যাঁদের জন্য জীবনের প্রায় সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন, আকন্ঠ ডুবে গিয়েছিলেন ঋণে, তাঁদের অধিকাংশই একে একে ওঁর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি নানারকম প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত পাশে থাকেননি। নিজের ভাই সংস্কৃত প্রেসের স্বত্ব পাওয়ার জন্য শুরু করেছিলেন মামলা। ফলত ঋণ শোধের জন্য বাধ্য হয়েছিলেন সেই প্রেস বিক্রি করে দিতে। প্রথম বিধবা বিবাহকারী শ্রীশ চন্দ্রের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন সাগরপারে মাইকেল মধুসূদনকে বাঁচানোর জন্য। সময়মতো সেই টাকা শোধ না করার জন্য শ্রীশ হুমকি দিয়েছিলেন মামলা করার। নিজের ছেলের দুষ্কর্মের জন্য বাধ্য হয়েছিলেন তাকে ত্যাজ্যপুত্র করতে। স্ত্রীর সঙ্গেও তৈরি হয়েছিল ব্যবধান। ফলত একটু শান্তিতে থাকার জন্য নিঃসঙ্গ বিদ্যাসাগর শেষ পর্যন্ত কলকাতার তথাকথিত ভদ্র সমাজ ত্যাগ করে বেছে নিয়েছিলেন কার্মাটাড়ে সাঁওতালদের সান্নিধ্য। একবার কলকাতার একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন, "পণ্ডিত, তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে সাঁওতালদের কাছে? অশিক্ষিত সাঁওতালরা তোমার এত প্রিয়?"
বিদ্যাসাগর ঋজুভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, "তোমাদের মতো বিত্তবান আর্য সন্তানদের থেকে আমার অশিক্ষিত সাঁওতালরা অনেক ভালো। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে না।"
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

'তুমিই তো একসময় তোমার বিখ্যাত চটি দেখিয়ে শিবনাথ শাস্ত্রীকে বলেছিলে, ভারতবর্ষে এমন রাজা নাই, যাহার নাকে এই চটিজুতা শুদ্ধ পা দুখানা তুলিয়া টক করিয়া লাথি মারিতে পারি না। অপমানের শোধ তুলতে চেয়ারে বসে হিন্দু কলেজের প্রিন্সিপাল ক্যর সাহেবের নাকের সামনে জুতো পরা পা তুলে দিতেও ভয় পাওনি, তাহলে আজ কেন শুধু হাত-পা নয়, সমস্ত অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে তোমার?' নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে চেয়ার থেকে উঠে জানলার পাশে এসে দাঁড়ালেন বিদ্যাসাগর। বাইরের দিকে তাকালেন। রাত দশটার পরই এই অঞ্চলটা শান্ত হয়ে যায়, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট ফেরত দু-একজন মদখোরের বেপরোয়া চিৎকার ও কুকুরের ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। এখন রাত প্রায় একটা, চারদিকে নেমে এসেছে সম্পূর্ণ নৈঃশব্দ্য, আকাশের চাঁদের ওপর দিয়ে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভেসে যাচ্ছে। একটু দূরে গ্যাসের বাতিটা মিট মিট করে জ্বলছে। দিনের বেলায় এই অঞ্চল মানুষের কোলাহলে ডুবে থাকে। টাঙা, ল্যান্ডো, বগি গাড়ি টানতে থাকা ঘোড়ার খুরের আওয়াজে কেঁপে ওঠে। পেরিয়ে যায় কোনো রাজা বা জমিদারের পালকি। বিদ্যাসাগর ঘোড়ার গাড়ি বা পালকি চড়তে পছন্দ করেন না, কিন্তু কয়েক বছর আগে মিস কারপেন্টারের সঙ্গে উত্তরপাড়া থেকে ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন, তারপর থেকেই হেঁটে চলাফেরা কমে গেছে ওঁর। বিদ্যাসাগর হাত উঁচু করে শরীর মুচড়ে শ্বাস নিয়ে আবার ঘুরে এসে চেয়ারের ওপরে বসেন। তাঁর পরনে ধুতি ও একটা উড়নি। কপালে আনুভূমিক ভাঁজ। ধূমপান করতে ভালোবাসেন, হতাশায় ডোবানো শরীর-মন, এখন একটু ধূমপান করতে পারলে ভালো লাগত। এগিয়ে গিয়ে থেলো ইকো খালি করে নতুন জল ভরলেন। কঞ্চির মধ্যে ছোট্ট গুলি রেখে ওপরে তামাক জমিয়ে সেই তামাকে আগুন ধরিয়ে হুঁকোয় মুখ লাগিয়ে টানতে থাকেন। ধোঁয়া ছাড়তে থাকেন। ধোঁয়ায় ভরে যায় ঘর। জীবনে কখনও এই রকম দুঃসময় আসবে, তিনি কল্পনাই করতে পারেননি। বিদ্যাসাগর তাকিয়ে দেখেন, খোলা জানলার ভিতর দিয়ে ঘরের মধ্যের পাক খেতে থাকা ধোঁয়া বেরিয়ে যাচ্ছে। মনে হল, আমার জীবনের পুঞ্জীভূত ধোঁয়াগুলো কেন এইরকমভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে না?'

পর্যালোচনা ও রেটিং

0 মোট 5.0 -এ
(0 পর্যালোচনা)
এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (1)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

Ananya rabindranath by nitai basu
Shibnath Chatterjee
https://boierhaat.com/product/Ananya-Rabindranath-N4Qcg
টিম বইয়ের হাট