'তুমিই তো একসময় তোমার বিখ্যাত চটি দেখিয়ে শিবনাথ শাস্ত্রীকে বলেছিলে, ভারতবর্ষে এমন রাজা নাই, যাহার নাকে এই চটিজুতা শুদ্ধ পা দুখানা তুলিয়া টক করিয়া লাথি মারিতে পারি না। অপমানের শোধ তুলতে চেয়ারে বসে হিন্দু কলেজের প্রিন্সিপাল ক্যর সাহেবের নাকের সামনে জুতো পরা পা তুলে দিতেও ভয় পাওনি, তাহলে আজ কেন শুধু হাত-পা নয়, সমস্ত অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে তোমার?' নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে চেয়ার থেকে উঠে জানলার পাশে এসে দাঁড়ালেন বিদ্যাসাগর। বাইরের দিকে তাকালেন। রাত দশটার পরই এই অঞ্চলটা শান্ত হয়ে যায়, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট ফেরত দু-একজন মদখোরের বেপরোয়া চিৎকার ও কুকুরের ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। এখন রাত প্রায় একটা, চারদিকে নেমে এসেছে সম্পূর্ণ নৈঃশব্দ্য, আকাশের চাঁদের ওপর দিয়ে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভেসে যাচ্ছে। একটু দূরে গ্যাসের বাতিটা মিট মিট করে জ্বলছে। দিনের বেলায় এই অঞ্চল মানুষের কোলাহলে ডুবে থাকে। টাঙা, ল্যান্ডো, বগি গাড়ি টানতে থাকা ঘোড়ার খুরের আওয়াজে কেঁপে ওঠে। পেরিয়ে যায় কোনো রাজা বা জমিদারের পালকি। বিদ্যাসাগর ঘোড়ার গাড়ি বা পালকি চড়তে পছন্দ করেন না, কিন্তু কয়েক বছর আগে মিস কারপেন্টারের সঙ্গে উত্তরপাড়া থেকে ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন, তারপর থেকেই হেঁটে চলাফেরা কমে গেছে ওঁর। বিদ্যাসাগর হাত উঁচু করে শরীর মুচড়ে শ্বাস নিয়ে আবার ঘুরে এসে চেয়ারের ওপরে বসেন। তাঁর পরনে ধুতি ও একটা উড়নি। কপালে আনুভূমিক ভাঁজ। ধূমপান করতে ভালোবাসেন, হতাশায় ডোবানো শরীর-মন, এখন একটু ধূমপান করতে পারলে ভালো লাগত। এগিয়ে গিয়ে থেলো ইকো খালি করে নতুন জল ভরলেন। কঞ্চির মধ্যে ছোট্ট গুলি রেখে ওপরে তামাক জমিয়ে সেই তামাকে আগুন ধরিয়ে হুঁকোয় মুখ লাগিয়ে টানতে থাকেন। ধোঁয়া ছাড়তে থাকেন। ধোঁয়ায় ভরে যায় ঘর। জীবনে কখনও এই রকম দুঃসময় আসবে, তিনি কল্পনাই করতে পারেননি। বিদ্যাসাগর তাকিয়ে দেখেন, খোলা জানলার ভিতর দিয়ে ঘরের মধ্যের পাক খেতে থাকা ধোঁয়া বেরিয়ে যাচ্ছে। মনে হল, আমার জীবনের পুঞ্জীভূত ধোঁয়াগুলো কেন এইরকমভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে না?'
এই ওয়েবসাইটের কার্যকারিতার জন্য আমরা কুকি ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও ওয়েবসাইটের ট্রাফিক সঙ্ক্রান্ত তথ্যের জন্য আমরা কুকির সাহায্য নিই। নিচের বটন ক্লিকের মাধ্যমে আপনি সমস্ত রকমের কুকি ব্যবহারে সম্মতি জানাচ্ছেন।