যেন ভুলে না যাই
শ্রীমতী শোভা ঘোষ
সম্পাদনা : যশোধর রায়চৌধুরী
প্রচ্ছদ : প্রদীপ দত্ত
" যেন ভুলে না যাই"
বাংলা ভাষাকে যারা ভালবাসেন এবং চান আঞ্চলিক ভাষাগুলো সমমর্যাদায় টিকে থাকুক তাদের একবার হাতে নিয়ে দেখতেই হবে শ্রীমতী শোভা ঘোষের লেখা "যেন ভুলে না যাই" বইটি। লেখা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। প্রকাশ করেছিল ' বরিশাল সেবা সমিতি ' । যুক্তাক্ষর প্রকাশনী বইটি পুনর্মুদ্রণ করেছে সম্প্রতি, অরিজিনাল বইটিকে এক রকম রেখে। বইটি সম্পাদনা করেছেন শোভা ঘোষের দৌহিত্রী বিশিষ্ট কবি এবং লেখক যশোধরা রায়চৌধুরী। শোভা ঘোষ ছিলেন এক বিদুষী নারী। তিনি ছিলেন ঢাকার কন্যা, বরিশালের বধু। স্বাধীনতার পর থেকে বাস করেছেন রাজাবাজার অঞ্চলে। ১৯৮০-র আশেপাশে এইধরনের বই লেখার ধারণা করা আমাদের বুঝিয়ে দেয় সময়ের থেকে কতটা এগিয়ে ছিলেন তিনি। অতদিন আগেই তিনি বুঝেছিলেন বাংলা ভাষার সমস্ত রূপকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা কতটা জরুরি একটা কাজ। সেই কঠিন কাজটিই তিনি করেছিলেন "যেন ভুলে না যাই" বইটিতে।
বাংলা ভাষার তো একটা রূপ নয়। রয়েছে এক বাংলার মধ্যেই অনেক রকম বাংলা। প্রতিটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং সবরকম বাংলাকেই সযত্নে রক্ষা করার দরকার। আঞ্চলিক ভাষার ওপর প্রমিত বাংলার আগ্রাসন তো অনেকসময়েই আমাদের নজরে আসে। আবার বাংলার ওপর রয়েছে অন্য ভাষার আগ্রাসন। তাই শহুরে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা শুদ্ধ বাংলা বলার বা লেখার প্রয়োজন বোধ করে না। তাদের অভিভাবকরাও এই বিষয়ে উদাসীন। এই যে বাংলা ভাষার এত রূপ , এক এক অঞ্চলে এক একরকম কথ্য ভাষা, পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কতরকম ডায়ালেক্ট। শোভা ঘোষ ওঁর বইতে আমাদের উপহার দিলেন পূর্ব বাংলার নানা অঞ্চলের ভাষার আখ্যান। ঢাকা বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় লিখেছেন নিজে এবং সিলেট ও চট্টগ্রামের ভাষায় লিখিয়েছেন দুই বান্ধবীকে দিয়ে। পাতার বাঁ দিকে মুদ্রিত পূর্ববঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা ডানে প্রমিত বাংলা। উনি লিখছেন,
"আমি মোনে মোনে ভাবি কি, যারা দ্যাশ ছারিয়া আইলে হ্যারগো পোলাপানরা যে দ্যাশের কথা এক্কেকালে ভুলিয়া যাইতে লাগলে, এয়ার কি পিরতীকার করন যায়। গুরাগারারা এহন দ্যাশের ভাষা শোনলে ফ্যালফ্যালাইয়া চাইয়া থাকে। এয়া তো আমার সইহ্য হয় না।"
প্রমিত বাংলায়
" আমি মনে মনে ভাবি কি যারা দেশ ছেড়ে এল তাদের ছেলেমেয়েরা যে দেশের কথা একবারে ভুলে যাচ্ছে, তার কি প্রতিকার করা যায়? ছোট ছেলেমেয়েরা এখন দেশের ভাষা শুনলে ফ্যাল্ ফ্যাল্ করে তাকিয়ে থাকে। এতো আমার সহ্য হয়না।"
এই বই আমাদের কাছে মেলে ধরে আঞ্চলিক ভাষার মাধুর্য আর তাদের আঞ্চলিক জীবনযাপনের ছবি। এই বইটি উদ্বোধন করে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায় বলেছিলেন plurilingualism এর কথা ... অর্থাৎ বহু ভাষা, বহু ভেদ। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন ভাষার অন্য ভেদগুলি যেন মুছে না যায়। এগুলোকে টিকিয়ে রাখার কাজটি বড় জরুরি। এবং এই কাজটিই করেছিলেন শোভা ঘোষ এতদিন আগে তাঁর বইতে। এই বই প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ রায় আরও বলেন," এই বইটি যিনি লিখেছেন তিনি লিঙ্গপরিচয়ে মা,,, সদরের মুখোমুখি হলেও অন্দরের বৈশিষ্ট্যকে অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বহন করতে পারছেন।" আখ্যানগুলি আমাদের মুগ্ধ করে। নিজের ভাষায় কথা না বলতে পারার দুঃখ তাঁরা প্রকাশ করছেন তাঁদের লেখায়। একটি অত্যন্ত মূল্যবান বই।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি