কত মানুষ কত কথা
দিব্যেন্দু দাস
ভূমিকা
বিগত দুই দশকেরও বেশী দীর্ঘ সময়টাতে নানা বিষয়ভিত্তিক বহু লেখা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত এবং আকাশবাণীতে প্রচারিত হয়েছে। আমার শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই জানিয়েছেন যে সেইসব লেখা কোনও গ্রন্থে সংকলিত অবস্থায় পেলে তাদের ভালো লাগবে, কাজেও লাগবে। শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শেই প্রকাশিত এবং প্রচারিত কিছু লেখা বেছে নিয়েই এই সংকলন। এতে মূলত রাখা হয়েছে পরিচিত নানা ব্যক্তিত্বের কথা, তাদের ভাবনা এবং কাজের কথা। এই গ্রন্থে সংকলিত লেখাগুলির অনেক লেখা আকাশবাণীতে বিভিন্ন সময়ে প্রচারিত হয়েছে। তবে এখানে যেটা বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন সেটা হল প্রচারিত এবং প্রকাশিত লেখাগুলিকে পরিমার্জিত এবং পরিবর্ধিত করা হয়েছে পাঠকদের কথা বিবেচনায় রেখে। করা হয়েছে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনও। বিগত দুই দশকের বেশী সময়টাতে বহু ব্যক্তিত্ব যারা সংবাদ-শিরোনামে উঠে এসেছেন মূলত তাদের নিয়েই এইসব লেখা।
একসময় জিম্বাবোয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের জনক বলে পরিচিত রবার্ট মুগাবে পরবর্তী কালে চিহ্নিত হয়েছেন স্বৈরাচারী, ক্ষমতালোভী এক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে। অসুস্থ পিতাকে দেখতে অক্সফোর্ডের এক গৃহবধূ আঙু সান সু চি ইয়াংগনে (রেঙ্গুনে) এসে ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়েন বার্মার (এখনকার মায়ানমার) মানুষের নাগরিক অধিকার তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণআন্দোলনে। স্বদেশের জটিল রাজনৈতিক আবহে তিনি শিকার হন শাসকের কঠোর দমন-পীড়নের। মুম্বাইয়ের সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে'কে নিজের জীবন দিতে হয় 'অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতার' মধ্য দিয়ে অপরাধ-জগতের পর্দা ফাঁস করার কারণে। লিবিয়ায় একটানা বিয়াল্লিশ বছর শাসন করেছেন কর্নেল মুয়াম্মর গদ্দাফি। একসময় লিবিয়ার 'বিপ্লবের নেতা ও পথপ্রদর্শক' হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা গদ্দাফি পরবর্তী সময়ে চিহ্নিত হন স্বৈরাচারী, কর্তৃত্বপরায়ণ, অসহিষ্ণু শাসক বলে। গদ্দাফির জীবনের অন্তিম মুহূর্ত মনে করিয়ে দেয় সাদ্দাম হুসেনের জীবনের অন্তিম সময়টাকে। সাদ্দামকে অবশ্য ফাঁসিতে ঝোলানো হয়, গদ্দাফিকে তার বিরোধীরা হত্যা করে নৃশংসভাবে। বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স তার প্রয়াণের দেড়শো বছরের বেশী সময় পরেও সাহিত্যানুরাগীদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়। ডিকেন্সের মানবিক চেতনা, সমাজ সচেতনতার প্রাসঙ্গিকতা এখনও খুঁজে পান তার পাঠকরা তারই লেখায়। হিন্দী সিনেমার (বলিউড) প্রথম 'মহাতারকা' (Superstar) বলে চিহ্নিত রাজেশ খান্নার প্রয়াণের পর তার দেহ নিয়ে অন্তিম যাত্রার আবহ যেন কখনই ভোলার নয়। অগণিত অনুরাগী ও সেই সঙ্গে প্রকৃতিও যেন চোখের জলে ভেসে তাকে বিদায় জানিয়েছিল। শারদোৎসবের আবহে এক মহাষ্টমীর রাতে মহাপ্রস্থানে যান সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, পাঁচ দশকের বেশী সময় ধরে বাংলা সাহিত্যের সৃজনশীলতার অঙ্গনে যার ছিল অত্যুজ্জ্বল উপস্থিতি। ২০১৩-র ২৪ অক্টোবর কিংবদন্তী গায়ক মান্না দে তার অগণিত অনুরাগীদের বিষাদাচ্ছন্ন করে পাড়ি দেন 'সুরলোকে'। মান্না দে-র জীবনাবসান ঘটে বেঙ্গালুরুতে, অন্ত্যেষ্টিও সম্পন্ন হয় সেখানে নিতান্ত সাদামাটাভাবে। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের খেদ, মান্না দে-র শেষকৃত্যানুষ্ঠান যদি কলকাতায় হত তাহলে তারা একটা ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারতেন। দেখতে পেতেন রাজপথে জনজোয়ার।
এক সময়ের দস্যুনেত্রী হিসেবে পরিচিত ফুলন দেবী নিজের অতীত মুছে ফেলে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লক্ষ্যে পরবর্তীকালে পা বাড়ান সামনের দিকে। সাংসদ হন, জনজীবনে প্রবেশ করেন। বাঁচতে চেয়েছিলেন মানুষের মর্যাদা নিয়ে, নিজের অতীতের মনুষ্যেতর অস্তিত্বের কথা ভোলার জন্য। কিন্তু তা আর হল কৈ। আততায়ীর বুলেট কেড়ে নেয় তার প্রাণ। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে অপমৃত্যু ঘটল এক বিশেষ সম্ভাবনার। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর মতো মানুষেরও নিন্দুকের অভাব হয় না। নেলসন ম্যান্ডেলা তার সাড়ে নয় দশকের জীবনকালে প্রায় তিন দশকই কাটাতে বাধ্য হয়েছেন কারান্তরালে থাকার যন্ত্রণা নিয়ে।
এদের ছাড়াও আরো অনেকের কথা রয়েছে এই বইয়ে। রয়েছে মানুষের জীবনের ধ্রুবতারাসম রবীন্দ্রনাথের কথা। রয়েছে মানবাধিকার আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব রেভারেন্ড জেসি জ্যাকসন, কৈলাশ সত্যার্থী ও মালালা ইউসুফজাই, 'কমন ম্যান'-য়ের স্রষ্টা আর. কে. লক্ষ্মণ, ফিদেল কাস্ত্রো, বিনোদ খান্না, দিলীপ কুমার, ঋষি কাপুর, সুশান্ত সিং রাজপুত, হেলমুট কোল, এয়ার মার্শাল অর্জন সিং, নোবেলজয়ী সাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরো, কুলভূষণ যাদব, সবিতা হলপ্পানাভার, প্রণব মুখোপাধ্যায়, অটল বিহারী বাজপেয়ী, ভি এস নইপাল, নাম্বি নারায়ণন, জুজানা কাপুতোভা, মুজিবুর রহমান, বল্লভভাই প্যাটেল, বি আর আম্বেদকার, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বের কথা। রয়েছে গৌতম বুদ্ধ, প্রভু যীশু, স্বামী বিবেকানন্দ, গুরু নানক, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মতো অনন্যসাধারণ মানুষের জীবনাদর্শ ও কর্মের কথাও।
প্রত্যাশা রয়েছে, সংকলনটি পাঠকদের কাছে সমকালীন দর্পণের মতো হয়ে থাকবে। লেখাগুলি যে সমকালের বীক্ষণ। পাঠকরা চিন্তার খোরাক পাবেন এই প্রত্যয় রইলো।
'অতিমারীর কালবেলায়'-য়ের পর 'কত মানুষ কত কথা' মুদ্রিত অক্ষরের আলোয় নিজের মুখ দেখাতে পারলো। এর জন্য রাধা প্রকাশনীর কর্ণধার অভিজিৎ দেবের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।.....দিব্যেন্দু দাস অক্টোবর ১৫, ২০২৩ কলকাতা
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.