কলকাতার কালীবাড়ি-কথা

(0 পর্যালোচনা)

লিখেছেন:
অনীশ ঘোষ

দাম:
₹300.00

সংস্করণ:
পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

বই- কলকাতার কালীবাড়ি-কথা 

লেখক- অনীশ ঘোষ 

'কার্তিক মাসে দীপান্বিতা অমাবস্যায় যে কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয়, ইতিহাসবিদের মতে তা প্রথম শুরু করেছিলেন কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশই। তন্ত্রাচার্য কৃষ্ণানন্দ থাকতেন নবদ্বীপে। আগমবাগীশ নয় দ্বীপের মধ্যে একটি দ্বীপে তন্ত্রসাধনা করতেন ন'টি দিয়া তথা প্ৰদীপ জ্বালিয়ে। তখন থেকেই সাধারণ মানুষ ওই দ্বীপকে বলতেন ন-দিয়ার চর। পরে লোকমুখে ন-দিয়া থেকে হয় নদীয়া জেলা।

বিগ্রহ ছাড়া তন্ত্রসাধনা করতেন কৃষ্ণানন্দ। কিন্তু এক সময় তাঁর মনে প্রবল ইচ্ছা হল, বিগ্রহ পুজো করবেন দেবীমূর্তি নির্মাণ করে। কিন্তু তন্ত্রমতে মূর্তি কেমন হবে, চার হাতের মধ্যে কোন হাতে খড়্গ, কোন হাত অভয়মুদ্রার, কোন হাত বরদানের, দু'পায়ের মধ্যে কোন পা মহাকাল মহাদেবের বুকে রাখা হবে, দেবী বিগ্রহ কেমন হবে, এসব কিছুই ঠিক করতে পারলেন না আগমবাগীশ। মনমরা তান্ত্রিক মায়ের শ্রীচরণ স্মরণ করে চলেন। একদিন গভীর রাতে হঠাৎ দেবী স্বপ্নাদেশ দিলেন, 'কাল ভোরে যাকে তুমি প্রথম দর্শন করবে, তারই মধ্যে খুঁজে পাবে আমার রূপ। তুমি আমাকে সেইভাবেই মূর্তি গড়ে পুজো করবে।' উত্তেজনায় ও আনন্দে সারারাত আর ঘুম হল না কৃষ্ণানন্দর। তখনও ভোর হয়নি। আবছা আলো-আঁধারিতে নির্জন দ্বীপ ছেড়ে ছুটলেন লোকালয়ে। পৌঁছলেন একটি গ্রামে। সেখানে এক বাড়িতে তখনও কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। কৃষ্ণানন্দ দেখলেন ওই বাড়ির নববিবাহিতা গোপবধূ ঘরের দেওয়ালে সবেমাত্র গোবরমাটি দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। তাঁর ডান পা এগিয়ে, বাঁ হাতে গোবর মাটির তাল। মাটি লেপতে গিয়ে মাথার খোঁপা খুলে গিয়ে গোটা পিঠটা ঢেকে গেছে এলোচুলে। দ্রুত কাজ করছেন, তাই বিন্দু বিন্দু ঘাম কপাল জুড়ে জমে আছে। হাতে মাটি থাকায় হাতের উলটো পিঠ দিয়ে ঘাম মুছতে গিয়ে কপালের সিঁদুরে রাঙা হয়ে যায় তাঁর ভ্রু দুটি। ডান হাতে ধরা গো মাটির তালটি ওপর দিকে তুলে যখন মাটির দিকে নামাতে যাবেন বধূটি, ঠিক সেই সময় কৃষ্ণানন্দ প্রথম দর্শন করলেন এই গোপবধূকে। প্রণাম করলেন দু'হাত জোড় করে। এদিকে পরপুরুষ তাঁর মুখদর্শন করে ফেলেছেন দেখে গোপবধূ লজ্জায় জিভ কেটে ফেললেন। কৃষ্ণানন্দের দেবী মূর্তি নির্মাণের সমস্ত ধারণাই মিলল গোপবধূর মধ্যে। পর্ণকুটিরের সাধন আসনে ফিরে এলেন কৃষ্ণানন্দ। একা মনে এই ভাবটি সামনে রেখে তন্ত্রাচার্য কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ তৈরি করলেন আজকের প্রচলিত শ্যামা তথা কালীমূর্তি। আজ থেকে আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে, গঙ্গাতীরে শ্রীচৈতন্যের পদধূলিধন্য নবদ্বীপের প্রায় জনমানবশূন্য জঙ্গলাবৃত দ্বীপে। বাংলায় এইভাবেই প্রথম দেবী কালিকার প্রসন্নময়ী বিগ্রহ রূপ পেল।'

চিত্তের আরাধ্য দেবী চিত্রেশ্বরী বা চিত্তেশ্বরীর মন্দিরটি আদি চিত্তেশ্বরীর মন্দির নামেও পরিচিত। এই মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে। বর্তমানে মন্দিরটি যেখানে আছে, অতীতে তার অবস্থান সেখানেই ছিল কিনা তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন। অনেকের ধারণা, মন্দিরটি এক সময় ছিল গঙ্গার ধারে জঙ্গলে ঘেরা একটা জায়গায়। পরে নদীর চরা পড়ায় বর্তমানে এটি গঙ্গার থেকে অনেকটা দূরে অবস্থান করছে।

  চিত্রেশ্বর ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে তান্ত্রিক মতে দেবীকে পুজো দিত। ষোড়শোপচারে পুজোর অন্যতম উপকরণ ছিল নরবলি। ডাকাত সর্দার চিত্রেশ্বরের নাম অনুসারে এখানে দশভূজা দেবীর নাম চিত্রেশ্বরী। এখানে এত মানুষের বলি দেওয়া হত, যা সারা বাংলার আর কোনও মন্দিরে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা ক্যালকাটা রিভিউ-এ প্রকাশিত লেখার প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে পারি। সেখানে লেখা আছে— 'According to popular and uncontradicted tradition, this was the spot where the largest number of Human sacrifices was offered to Goddess in Bengal before the establishment of the British Government'

  ডাকাত চিত্রেশ্বরের আরাধ্য দেবতা কালী না দুর্গা, তা নিয়ে একটা বিতর্ক অবশ্য থেকে গেছে। কারণ মন্দিরের গর্ভগৃহে আমরা যে দেবীকে দেখতে পাই তা কিন্তু দেবী দুর্গারই প্রতিরূপ।

 এখানের দেবী মাঝারি আকারের দারুমূর্তি। দেবীর পরনে শাড়ি। মাথায় শোভা পাচ্ছে মুকুট, নাকে নথ, কানে কানপাশা। এখানের অসুর সবুজ রঙের। দেবী তাকে ত্রিশুলবিদ্ধ করেছেন। দেবীর ত্রিশুলের ঘায়ে অসুরের বুক বিদীর্ণ। দেবীর বাহন সিংহ এখানে সাদা। 

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat™   |   © All rights reserved 2024.