কুমারতন্ত্রম
সম্রাট রায় সম্পাদিত
বাংলা ভাষায় সর্ব প্রথম প্রকাশিত কার্তিকেয় তন্ত্রের উপর একমাত্র দুর্লভ গ্রন্থ!
-----------------------
ভগবান কার্তিক শিব-পার্বতীর জোষ্ঠ পুত্র, আশৈশব অজেয় যোদ্ধা, দেব সেনাপতি, আবার পরাজ্ঞানের জ্ঞাতা। তিনি পুত্র হয়েও বিশুদ্ধজ্ঞানদেহ ভগবান শিবের কাঁধে বসে উকারের রহস্য উপদেশ করেছিলেন। তাই তাঁর আরেক নাম শিব গুরু। শ্রীশ্রীরুদ্রচন্ডীর কবচের মতো বহু মন্ত্রের তিনি প্রষ্টা।
কার্তিকের জন্ম ও দৈবলীলা, বিবাহাদির বর্ণনা মূলতঃ পৌরাণিক হলেও, বেদেও তাঁর উপস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে তিনি স্কন্দ, কুমার ইত্যাদি নামে উল্লেখিত। ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ১৬৩।১ তম মন্ত্রে আছে-
যদক্রন্দঃ প্রথমং জায়মান উদ্যত্বসমূদ্রাহত বা পুরীখাত।শোনস্য পক্ষা হরিণস্য বাহু উপস্থতাং মহি জাতং তে অর্থদ।।
স্কান্দ মহাপুরাণের শঙ্করসংহিতার অন্তর্গত শিবরহস্যখণ্ডে ভগবান সুব্রহ্মণ্যের বিভিন্ন লীলা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। অসুর শূরপদ্মের সাথে মহাসমরের অন্তিম মুহূর্তে, মায়াধারী দানবের নিকট মায়াধীশ কুমার প্রকাশ করেন তাঁর পরমাত্মর বিশ্বরূপ-তমেনমসুরং বীক্ষ্য দেবঃ পরমবৈভবঃ।
এতানি তবরূপাণি দৃষ্টবানম্মি দানব।
মদীয়মপিরূপং ত্বং পশ্যেত্যুত্ত্বাংমরেশ্বরঃ।
জগ্রাহ বিশ্বরূপং স্বমবাত্মানসগোচরম্।
মহান্তঃ পর্বতা পাদতলমধ্যে ব্যবস্থিতাঃ।
সাগরাঃ প্রপদে তস্য তারকা ত্যুদিনী গ্রহাঃ।
পাদাঙ্গলীয় বিশ্রান্তা ওল্ফয়োশশি ভান্তরৌ।
নৈষ্কৃত্যাপাংপতী তাবপ্যত্রৈবান্তর্গতাবুভৌ।
জঙ্ঘয়োক্বষয়শ্চিন্তামণির্জানেী মহেশিতুঃ।
বিদ্যাদয়ঃ স্থিতা ইন্দ্রজয়ন্তাবুকসংস্থিতৌ।
কটিসন্ধৌ কালযমাবসূরাঃ কটিদেশগাঃ।
পার্শ্বভাগে স্থিতা দেবা নাগা গুহ্যাদি দেশগাঃ।
শেফঃ স্থমমৃতং নাভাবুৎপত্তির্জগতাংপ্রভোঃ।
দিব্যে বক্ষসি শাস্ত্রাণি জ্ঞানং যজ্ঞোপবীতকম্॥
অণ্ডানি রোমকূপেষু পাণৌ ভোগস্য সংস্থিতিঃ।
ব্রহ্মা বিষ্ণুশ্চ ভুজয়োরঙ্গুলীম্বমরন্দ্রিয়ঃ। শব্দজালমশেষন্তৎ কণ্ঠদেশে সমাধিতম্।
আস্যমধ্যে স্থিতাবেদা দেবদেবস্য ভুসুরাঃ।
অক্ষরাণি চ দন্তেষু জিহ্বয়ান্ত শিবাগমাঃ। সপ্তকোটিমহামন্ত্রা ওষ্ঠদেশে ব্যবস্থিতাঃ। বায়ুর্নাসিকসংস্থোহস্য নেত্রয়োরিন্দুভাস্করৌ। দিশশ্রোত্রপ্রদেশস্থা ললাটে প্রণবঃ স্থিতঃ।
পরমাত্মা শিবঃ সাক্ষাৎ স্বয়ং শিরসি রাজতে। এবমত্যদ্ভূতং রূপং দর্শয়ামাস যম্মুখঃ।
-সেই অসুরকে দেখে পরমবৈভবময় স্কন্দদেব বললেন, "হে দানব, তোমার এই সমস্ত রূপ তো দেখলাম! এবার তুমি আমার এই রূপ দর্শন করো!" এই বলে, অমরেশ্বর স্কন্দ স্বীয় বাক্যমনাতীত বিশ্বরূপ প্রদর্শন করলেন।
তাঁর পদতলে মহাতল থেকে পর্বতসমূহ অবস্থান করছে; প্রপদে সাগরসমূহ: পদাঙ্গুলিসমূহে তারকা, হ্লাদিনী ও গ্রহগণ; গুল্ফদ্বয়ে চন্দ্র ও সূর্য; এবং নৈঋত ও জলাধিপতি বরুণও সেখানে তাঁর পদযুগলের অন্তর্গত।
তাঁর জঙ্ঘাদ্বয়ে ঋষিগণ; সেই মহেশানের চিন্তামণিময় জানুদ্বয়ে বিদ্যাসমূহ; আর উরুদ্বয়ে ইন্দ্র ও জয়ন্ত অবস্থিত। তাঁর কটিসন্ধিতে কাল ও যম; কটিদেশে অসুরগণ; পার্শ্বভাগে দেব, নাগ, যক্ষ আদি নানালোকস্থ দেবযোনিদের অবস্থান। তাঁর লিঙ্গে অমৃত; প্রভুর নাভিতে জগতের উৎপত্তি; দিব্য বক্ষস্থলে শাস্ত্রসমূহ অবস্থান করছে। মূর্তিমান জ্ঞান তাঁর যজ্ঞোপবীত।
তাঁর রোমকূপসমূহে বিবিধ ব্রহ্মাণ্ড; দুই পাণিতে ভোগ; দুই ভূজে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু; এবং করাঙ্গুলিসমূহে দেবনারীগণের অবস্থান। তাঁর কণ্ঠদেশে অশেষ শব্দজাল; সেই দেবদেবের মুখমধ্যে বেদসমূহ এবং ব্রাহ্মণগণ অবস্থিত। তাঁর দন্তসমূহে অক্ষরগণ, জিহ্বায় শিবময় আগমসমূহ; ওষ্ঠদেশে সপ্তকোটি মহামন্ত্র অবস্থিত। তাঁর নাসিকায় বায়ু; নেত্রদ্বয়ে চন্দ্র ও সূর্য; কর্ণদেশে দিকসকল; ললাটে প্রণবের অবস্থান। তাঁর শিরোদেশে বিরাজ করছেন স্বয়ং পরমাত্মা শিব। এই অত্যদ্ভূত রূপ ভগবান ষড়ানন প্রদর্শন করলেন।
বর্তমানে স্মার্তসম্মত পঞ্চায়তনী উপাসনা প্রচলিত থাকলেও গণেশ, সূর্য, বিষ্ণু, শিব, শক্তির পাশাপাশি আগ্নেয় সম্প্রদায়ের উল্লেখ শাস্ত্রে আছে। অগ্নি কার্তিকের পালকপিতা বিধায় দক্ষিণ ভারতে এখনও ভগবান কার্তিকের উপাসক সম্প্রদায়। প্রবল। মহারাষ্ট্রে যেমন অষ্টবিনায়ক তীর্থ বিদ্যমান, তামিল দেশে সেইরূপ কার্তিকের মূল ছ'টি তীর্থক্ষেত্র রয়েছে। বলা বাহুল্য ভগবান স্কন্দের আবাসস্থল দক্ষিণ ভারতের ক্রৌঞ্চ পর্বত।
বঙ্গদেশে এযাবৎ কার্তিক সংক্রান্তিতে সন্তান কামনায় কুমার ব্রত, শারদীয়া ও বাসন্তী দুর্গাপূজায় পার্শ্ব দেবতা রূপে কার্তিক পূজার প্রচলন থাকলেও, গণেশ, লক্ষ্মী বা সরস্বতীর মতো ভগবান স্কন্দের তন্ত্রোক্ত বিবিধ মন্ত্র ও তার প্রয়োগবিধি, সাঙ্গোপাঙ্গো পূজা, স্তোত্রাদি অনুপলব্ধ ছিল। বর্তমানে বাজারে কার্তিক পূজার যে পুস্তকাদি পাওয়া যায়, তাতে সপ্রমাণ মন্ত্র, তার ঋষ্যাদি কিছুই ঠিকঠাক থাকে না। সঠিক ভাবে স্বন্দোপাসনার একটা আগ্রহ থেকেই আমার অনুসন্ধান বেশ কিছুদিন ধরে চলছিল। এরই মধ্যে তামিল লিপিতে মদ্রপুরীর পণ্ডিত শ্রী কে বি শেষাদ্রিনাথ শর্মা, সাহিত্য-আয়ুর্বেদাচার্য্য সঙ্কলিত শিবপ্রোক্ত মূল কুমারতন্ত্রটি আমার হাতে আসে। এটি একটি সম্পূর্ণ তন্ত্রগ্রন্থ যার মধ্যে ভগবান স্কন্দের সমস্ত মন্ত্রনির্ণয়, তাদের আলাদা আলাদা প্রয়োগবিধি, ধ্যানাদি, সাঙ্গোপাঙ্গো পূজা, স্তব, কবচ, পুরশ্চরণ, অভিষেক, দীক্ষা, প্রতিষ্ঠা, পরিবার পুজন ইত্যাদি প্রায় সমস্ত বিষয় বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থটি সম্পূর্ণ সংস্কৃত ভাষায়, যদিও সহজেই বোধগম্য। সাধক সমাজ এর দ্বারা কিছুমাত্র উপকৃত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা না বললেই নয়, মূল গ্রন্থটি তামিল ভাষায় রচিত। এ প্রসঙ্গে আরও জানাই যে, কার্ত্তিক তন্ত্রের উপর বাংলা ভাষায় এটিই প্রথম প্রামাণ্য গ্রন্থ।
শেষে প্রাচীর কর্ণধার জয়দীপদাকে ধন্যবাদ এই বইটি ছাপতে রাজী হওয়ায়। আমার ভ্রাতৃপ্রতিম শ্রী প্রান্তিক দাশকে ধন্যবাদ ভগবান কার্তিকের বিশ্বরূপটি জানানোর জন্য। ভগবান ষড়ানন সকলের কল্যাণ বিধান করুন।
---সম্রাট রায়
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি