পর্যায় সারণির ইতিকথা: দেড়শ বছর পেরিয়ে
লেখক - অশোক মুখোপাধ্যায়
শিক্ষাব্যবস্থা একটা শক্তিশালী মাধ্যম। কিন্তু বর্তমান চরম দক্ষিণপন্থী সরকার সেই ব্যবস্থাটার প্রয়োজনীয় সদর্থক সংস্কারের বদলে ঠিক উল্টো পথে হেঁটে শিক্ষা ব্যবস্থাটা এমনভাবে গড়ে নিতে চাইছে যাতে করে একজন শিশুর বিজ্ঞানসম্মত মনন গড়ে না ওঠে। তার জন্যেই নানাবিধ আয়োজন। সেই হাজারো আয়োজনের একটি হচ্ছে মাধ্যমিক স্তরে জীবনবিজ্ঞানের সিলেবাস থেকে ডারউইনের মতবাদ তুলে দেওয়া, রসায়নের সিলেবাস থেকে পর্যায় সারণি তুলে দেওয়া, মুঘলদের ইতিহাস বাদ দেওয়া সহ স্কুলপাঠ্যে ইতিহাসের বিকৃতি ইত্যাদি। তারা হয়তো আরও উঁচু ক্লাসে গিয়ে সেগুলো পড়বে, কিন্তু মাধ্যমিক স্তর থেকে বহু বুনিয়াদী জিনিস বাদ দেওয়া মানে— যে গুটিকয় ছাত্রছাত্রী আমাদের মত উচ্চহারে ড্রপআউটের দেশেও উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করবে তাদেরকেও একটা বেসিক এবং সামগ্রিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করা— কারণ মাধ্যমিকের পরই বিজ্ঞান, কলা বা বাণিজ্য বিভাগের জন্যে তারা বিভক্ত হয়ে যাবে— একজন বিজ্ঞানের পড়ুয়ার ইতিহাসের জ্ঞান না থাকলে বা খণ্ডিতভাবে থাকলে বা বিকৃতভাবে থাকলে তাকে সমাজবিচ্ছিন্ন করে ফেলার প্রক্রিয়াটা সহজ হবে; কিংবা জীবের বিবর্তন বা মৌলিক পদার্থগুলোর ক্রমবিন্যাস ইত্যাদির মত বিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ধারণার ছিটেফোঁটা একজন বাণিজ্য বা কলা বিভাগের ছাত্র বা ছাত্রীর না থাকলে তাকে বিজ্ঞানসম্মত মানসিকতা থেকে ছিন্ন করে কেবলমাত্র সরকারী প্রচারে বিশ্বাসী, কর্তাভজা একজন ‘ডিগ্রীপ্রাপ্ত’ ‘উচ্চশিক্ষিত’ মানুষে পরিণত করা সম্ভব। শুধুমাত্র এটুকুই নয়, এর বাইরেও সম্ভবত আরও কোনো গোপন অভিসন্ধি আছে বর্তমান শাসকের— যা এই রকম সব সিলেবাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সাধিত হবে। সেগুলো নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে উন্মোচিত হবে।
কিন্তু শুধু ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। কারণ এই সব কিছুর সাথে জুড়ে আছে আমাদেরই পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ; তাদেরকেই বানানো হচ্ছে এই সামাজিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলোর গিনিপিগ। সেই কথা মাথায় রেখে যেমন একদিকে এই ক্ষতিকর পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে, তেমনই এই চর্চাগুলো পাঠ্যপুস্তকের বাইরে জিইয়ে রাখার প্রয়োজন থেকেই যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকেই আমাদের এই প্রকাশনা; একেবারে স্কুল স্তরের শিশুদের জন্যে না হলেও সেই ছোট্ট বন্ধুদের কাছে এই শিক্ষা যাঁরা নিয়ে যাবেন, যাঁরা স্কুল স্তরে বিষয়গুলো টিকিয়ে রাখা বা ফিরিয়ে আনার জন্য লড়ে যাবেন তাঁদের কাজে লাগার জন্যে এই প্রকাশনা। ইতিপূর্বেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ সংক্রান্ত একই লেখকের একটি পুস্তিকা প্রকাশ করার পর বিপুল সাড়া পেয়ে এটি আমাদের পরবর্তী উদ্যোগ।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি