রেখো মা দাসেরে মনে
লেখক - বর্ণালী ঘোষ দস্তিদার
প্রচ্ছদ - অভিব্রত সরকার
মাইকেল মধুসূদন দত্ত-কে নিয়ে লেখা বর্ণালী ঘোষ দস্তিদারের উপন্যাসটি মধুসূদন দত্তের একাধিক জীবনীগ্রন্থের তালিকায় একটি অন্যধারার সংযোজন। এ কোনও দুরূহ গবেষণা গ্রন্থ তো নয়ই, আবার তরল উপন্যাসও নয়। পাঠককে মাইকেলের জীবনের পাশাপাশি ঊনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের বর্ণময় সময়ে পৌঁছে দিয়েছেন লেখক। এর প্রধান গুণ ঋজু গদ্য এবং স্বতশ্চল গতিময়তা। উনিশ শতকের চরিত্রদের ভারী জীবন্ত মনে হয় এই সেরিব্রাল উপন্যাসে। অবিভক্ত বাংলার গ্রাম, যশোর, সাগরদাঁড়ি, কলকাতা শহর, লন্ডন, ফ্রান্স ফুটে উঠেছে লেখকের চমৎকার মুনশিয়ানায়। আজও যে গড় বাঙালি কোনওরকম অচলায়তন ভাঙতেই ভয় পায়, তখন কী দুর্জয় সাহস নিয়ে চলতি প্রথাকে ভেঙে খানখান করেছিলেন মধুসূদন, ভাবলে অবাক লাগে। তাঁর পাশ্চাত্য প্রীতির পেছনে ভোগবাদী লালচ ছিল না, ছিল ইংরেজ কবি হওয়ার দুর্মর বাসনা। মধুসূদন শুধু দান্তে, হোমার, শেলী, কিটস, বায়রনের একনিষ্ঠ পাঠকই ছিলেন না, তাঁর আকাঙ্ক্ষা ছিল ইংরেজ রোম্যান্টিক বা ভিক্টোরিয়ান কবিদের তালিকায় নিজের নামটিও সংযোজিত করা। এই উদ্দেশ্য সাধনে স্বধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান হতেও তাঁর কুণ্ঠা ছিল না। অমিত প্রতিভাধর এই মানুষটির বিলাসবহুল জীবনের প্রতি দুর্বলতা ছিল, আবার অমিতব্যয়িতার কারণে দারিদ্রও তাঁর পিছু ছাড়েনি। আর এই প্রবল চড়াই উতরাই-এ তিনি বারবার পাশে পেয়েছেন অকৃত্রিম বন্ধু বিদ্যাসাগর-কে। বাংলা সাহিত্যের এই বরপুত্র আজও কলকাতার পার্কস্ট্রীট কবরখানায় প্রিয়তমা স্ত্রী হেনরিয়েটার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত। লেখককে ধন্যবাদ দ্বিশতবছর পূর্বেকার এই কিংবদন্তী প্রতিভার মহাজীবনকে তিনি যথার্থ উপন্যাসের লাবণ্য দিয়েছেন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি