শ্রুতি ১১১
বনানী মুখোপাধ্যায়
সম্পাদনা : জগন্নাথ বসু ও ঊর্মিমালা বসু
শ্রুতিনাটক সমগ্র
বনানী মুখোপাধ্যায়ের শ্রুতিনাটক প্রসঙ্গে জগন্নাথ বসু ::
রেডিও-তে এফ.এম.-এর আবির্ভাব, এফ.এম. গোল্ড, এফ.এম. রেনবো, এরা বাংলা সংস্কৃতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এক ঝাঁক তরুণ রেডিও উপস্থাপক উঠে এসেছিলেন। যেমন ঊর্মিমালা, পূর্বাসা রায়, সৌমিত্র বসু, স্বরাজ বসু, অলক রায়ঘটক, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, এদের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে এফ.এন. চ্যানেল গুলো ঝলমল করতো। এদের মাঝে মাঝেই ছোট নাটকের দরকার হতো আর এঁদেরকে প্রায় নিয়মিত নাটক সাপ্লাই দিতেন বনানী মুখোপাধ্যায়। এবং সেগুলো জনপ্রিয়ও হতে লাগলো। তখনও আমার সঙ্গে ওনার সরাসরি পরিচয় হয়নি। আমি ওনার নাম জানতাম, এও জানতাম বিধায়ক ভট্টাচার্যের 'তাহার নামটি রঞ্জনা'-এ ওনার সাবলীল অভিনয়ের কথা। আমি জানতাম উনি বিধায়ক বাবুর মেয়ে। যদিও বিধায়ক বাবুর সঙ্গে আমার খুব ভালো পরিচয় ও যোগাযোগ ছিল। ঊর্মিদের মাধ্যমে প্রথমে আমার সঙ্গে বনানী মুখোপাধ্যায়ের নাটকের সঙ্গে আলাপ। আমি খুব মুগ্ধ হয়ে ওনার সংলাপ রচনায় মুন্সিয়ানা লক্ষ্য করতাম। কি অনাড়ম্বর সংলাপ অথচ মানুষের হৃদয়কে কি অনায়াসে উদ্বেলিত করতে পারে। সংলাপগুলো একত্রে এমন এক নাট্যমুহূর্ত তৈরি করে যা মানুষকে ছুঁয়ে যায়। আমার খুব রাগ হতো, আমি কেন বনানী মুখোপাধ্যায়ের নাটক পাই না, আমি কেন ওনার নাটক অভিনয় করতে পারি না। অবশেষে একদিন ঊর্মিমালার মাধ্যমেই বনানী দির সঙ্গে পরিচয় হলো, জানলাম আমি যেমন ওনার নাটক পছন্দ করি তেমন উনিও আমার অভিনয়ের গুনমুগ্ধ। এরপর থেকে আমরাও নিয়মিত বনানী দির নাটক পেতে থাকলাম এবং পরপর সবকটি নাটক-ই সুপার হিট। ওনার নাটক করতে করতে খেয়াল করলাম করুণ রসের পাশাপাশি হাসির নাটক-এও উনি সিদ্ধহস্ত। বনানী মুখোপাধ্যায় বড় হয়েছিলেন থিয়েটারের পরিবেশে। তার ফলে পরবর্তীতে সংলাপ রচনা ও নাটক রচনায় ক্ষেতে সেই পরিবেশের প্রভাব ওনার রচনাকে ঋদ্ধ করেছিল। করুণ রস ও হাস্য রসের যুগলবন্দীতে মানুষকে আন্দোলিত করে দেওয়ার দুর্লভ ক্ষমতা আছে বনানী মুখোপাধ্যায়ের নাটকের মধ্যে। আজ এই শ্রুতিনাটকের জনপ্রিয়তার একটি প্রধান স্তম্ভ হলেন বনানী মুখোপাধ্যায়।
বনানী মুখোপাধ্যায়ের নাটকের সংলাপে এমন একটি সাদামাটা আটপৌরে ব্যাপার থাকে তাতে যিনি অভিনয় করছেন তিনি যদি একটু বাড়তি অভিনয় যোগ করার চেষ্টা করেন তাহলেই নাটকটি মার খেয়ে যাবে। বনানী দির নাটকে সাফল্য পেতে গেলে অভিনেতাকে অত্যন্ত স্বাভাবিক হতে হবে। ওনার বাবা বিধায়ক ভট্টাচার্য ছিলেন খুব স্বাভাবিক অভিনেতা। আমি ওমন স্বাভাবিক অভিনেতা খুব কম দেখেছি। সেই অভিনয়ে প্রভাবেই বোধহয় বনানী মুখোপাধ্যায়ের নাটকের সংলাপগুলো এত স্বাভাবিক ও সাবলিল।
বনানী দির নাটক পেয়ে আমি হাতে চাঁদ পেয়েছিলাম। জীবনের গভীর কথাগুলো এত সহজে স্বাভাবিক ভাবে বনানীর নাটকে বলা আছে তেমনটি আমি অন্য কোথাও খুব বেশি পাইনি। ওই বিরল গুনাবলিই বনানী মুখোপাধ্যায়ের নাটকের একটি নিজস্ব ধারা বা নিজস্ব ঘরানা তৈরি করে দিয়েছে। আমায় আর ঊর্মিমালার শ্রুতিনাটক অভিনয়ের সাফল্যের অনেকটা জুড়ে রয়েছে বনানী মুখোপাধ্যায়ের নাটক।
শ্রুতিনাটকের অভিনয় এখন বেশ সংকটে। অনেকেরই এমন ধারণা আছে-'শ্রুতিনাটক-ও তো পড়ে দিলেই হয়।' কথাটা আংশিক সত্যও বটে। শ্রুতিনাটকে অতি-অভিনয় ব্রাত্য। 'অভিনয়' না করেও কি ভাবে অভিনয় করতে হবে সেই অভ্যাসের জন্য বনানী মুখোপাধ্যায়ের শ্রুতিনাটকগুলি আদর্শ।
আজ বনানী মুখোপাধ্যায়ের যাবতীয় শ্রুতিনাটকগুলি একসঙ্গে নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হচ্ছে এটা আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমি এই বইটির সর্বাঙ্গিন সাফল্য ও সার্থকতা কামনা করি।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি