তবুও কি সত্যি ?

(0 পর্যালোচনা)

লিখেছেন:
সংকলন
প্রকাশক:
শালিধান

দাম:
₹350.00

সংস্করণ:
পরিমাণ:

মোট দাম:
শেয়ার করুন:

বই - তবুও কি সত্যি ?

লেখক - সুকন্যা, দেবলীনা, বর্ণালী

মেক্সিকোর দ্য আইল্যান্ড অফ দ্য ডলস্ জায়গাটার সম্পর্কে লোকে অনেক কথা বলে। স্থানটি স্বাভাবিক নয়। বড় বড় গাছ এমন ভাবে দ্বীপটিতে বেড়ে উঠেছে যে শ্যাওলা ধরা মাটির বুকে দিনের আলোও পৌঁছতে পারে না। স্যাঁতস্যাঁতে সেই স্থানে বিভিন্ন পশু-পাখি আর পোকামাকড়ের বাস হলেও, মানুষ থাকে না। মাকড়সার জাল এবং পোকামাকড়ে পূর্ণ স্থানটি দিনের বেলাতেও যেতে ভয় লাগবে। আর সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হল যে এই সব গাছের ডাল থেকে ঝুলে থাকে একাধিক জীর্ণ রঙচটা পুতুল। চুল উঠে যাওয়া বা হাত ভাঙা পুতুল, চোখ উঠে যাওয়া আর ছেঁড়া জামা পরা, পা-হীন পুতুল। অসংখ্য এমন দুর্দশাগ্রস্ত পুতুল সার বেঁধে ঝুলন্ত অবস্থায় জায়গাটির চেহারা কেমন যেন ভয়াবহ করে তুলেছে। এই জন্যই এই স্থান ডলস্ আইল্যান্ড নামে পরিচিত। কিংবদন্তি অনুযায়ী বছর পঞ্চাশ আগে এই ১৯৫০-এর দশকে পুতুলগুলি এলোমেলোভাবে দ্বীপে উপস্থিত হতে শুরু করে ডন জুলিয়ান সান্তানা বারেরার হাত ধরে। সান্তানা থাকতেন পাশের একটি দ্বীপে, যেখানে তিনি তাঁর সবজি বিক্রি করার পর একা দিশি মদ খেতে যেতেন। শোনা যায়, একদিন একটি মেয়ে খালের জলে ফুটে থাকা লিলির জটলার মধ্যে জড়িয়ে ডুবে মারা যায়। এবং তার মৃতদেহ ভেসে আসে এই দ্বীপটির তীরে, যার আসল নাম লা লর্না। মৃতদেহটিকে জলে ভেসে আসতে দেখতে পান সান্তানা যিনি দাবি করেছেন যে মেয়েটির মৃতদেহ নাকি বার বার চিৎকার করে তাকে বলে “আমি আমার পুতুল চাই।” তার কিছুদিন পর ওই দ্বীপেরই একটা খালের মধ্যে সান্তানা খুঁজে পায় একটা পুতুল। আতঙ্কিত হয়ে সেই পুতুলটিকে তিনি ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন গাছের ডালে। সান্তানা বলেছিলেন এই ঘটনার পর থেকে এই দ্বীপে প্রায়শই তিনি খুঁজে পেতেন একটা না একটা জীর্ণ পুতুল। সান্তানা প্রতিটা পুতুলকে এক এক করে ঝুলিয়ে দিতে থাকে ওই দ্বীপের গাছের ডালে। সেই থেকে এই দ্বীপের নামের সঙ্গে, অবস্থার সঙ্গে কিংবদন্তি জড়িয়ে একটা ভৌতিক পরিবেশের সৃষ্টি করে রেখেছে। অবাক হয়ে শুনেছিলাম এই অদ্ভুত কাহিনি। অলৌকিক অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস অবিশ্বাস কোনোটিই ছিল না আমার। আজও তাই। মেরিয়নের কাছে এই কাহিনি রূপকথার মতো শুনতে লেগেছিল আমার। মনে হয়েছিল এ এক অপ্রকৃতিস্থ লোকের বিকার। মেরিয়নের গলায় প্রচ্ছন্ন একটা ভীতির আভাস পেয়েছিলাম। তাই হালকা করার জন্য তাকে বলেছিলাম কলকাতার পুতুলবাড়ির গল্প। নিজের কথা বলার ফাঁকে সে মন দিয়ে শুনেছিল আমার গল্প। মনে আছে ওর নীল চোখে প্রশ্ন মেখে জানতে চেয়েছিল, “তুমি গেছ নাকি? কিছু ফীল করেছ? আচ্ছা, বাড়িটার এমন নাম কেন?” বুঝেছিলাম মেরিয়নের এসব ব্যাপারে আগ্রহ অনেক। একটু হেসে বলেছিলাম, “একটা একটা করে বলি শোনো। আমার মামাবাড়ি কুমারটুলিতে। ওই এলাকাতেই আছে এই পুতুলবাড়ি। শুনেছি কলকাতায় একসময় যখন ‘বাবু’দের প্রতিপত্তি খুব ছিল, সেই আমলে এই বাড়ি ছিল আমদানি-রপ্তানিকৃত মালের গুদাম, মানে ওয়েরহাউস। এই বিশাল বাড়ির উপরে একটা পুতুলের মূর্তি আছে তাই এর নাম পুতুলবাড়ি। বাবু সম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খলতার প্রভাবেও কলুষিত হয়েছিল এক সময়। অনেকে বলে মেয়েলি কণ্ঠে কান্না শোনা যায়। গা ভারী লাগে। কিন্তু ওসব কিছু না। 

“মানে?” প্রশ্ন করেছিল মেরিয়ন। 

হেসে বলেছিলাম, “মানে ওসব কিছু নেই। আমার মামা বলেছেন, উনি গিয়ে থেকেও এসেছেন।” 

মেরিয়ন একটু গম্ভীর হয়ে বলেছিল, “মানে তুমি বিশ্বাস করো না, তাই তো?” 

হেসে বলেছিলাম, “অবিশ্বাসও করি না।” 

মেরিয়ন বলেছিল, “বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বাইরে গিয়ে যখন কারো জীবনে প্রভাব পড়ে, তখন তার কী নাম হয় অমিত?” উত্তর দিতে পারিনি। 

বলেছিলাম, “তোমার কথাটা বলো শুনি।” 

মেরিয়নের কপালে তখনও মেঘ। কিন্তু পরে বুঝেছিলাম ব্যাপারটা অত সহজ নয়।

ডলস্ আইল্যান্ডের কাহিনি বলে মেরিয়ন আবার ফিরেছিল তার পরিবারের গল্পে। তার ঠাকুরদা শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলেন ওই দ্বীপে। মেরিয়নের বাবা খুবই যুক্তিবাদী মানুষ। তিনি বাকি সকলের ভয় ও ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বৃদ্ধ তাঁর আঁকার সরঞ্জামের ঝুলি নিয়ে চলে যান সেই কুখ্যাত দ্বীপে। দিন কাটতে থাকে। সপ্তাহ যায়। বৃদ্ধের কোনো খবর আসে না। শেষে বাড়ির সবাই মেরিয়নের বাবার উপর ক্ষুব্ধ হন। তিনি জোর না করলে হয়তো এই দিন আসত না। এদিকে পরিবারের এই দুশ্চিন্তার কালে এক মুঠো ফুলের সুগন্ধের মতো মেরিয়নের জন্ম। বাবা আদর করে এমন পুতুলের মতো ছোট্ট মেয়ের নাম রাখেন মেরিয়নেট। সেই থেকেই মেরিয়ন। মাস খানেক যেতেই বাবা আর থাকতে পারেননি। মানসিক চাপ তো একটা ছিলই তাঁর। তিনি বেরিয়ে পড়েন নিজের বাবার সন্ধানে। বাবা ফিরে এসেছিলেন দিন দশেক পর। না, ঠাকুরদা আর ফেরেননি। আমার চোখের সামনে এক অচেনা জগতের দরজা যেন খুলে যাচ্ছিল। মনে আছে উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তারপর? তোমার ঠাকুরদার কোনো খোঁজ পাওনি আর?” মাথা নেড়েছিল মেরিয়ন। বলেছিল যে, তার বাবা অনেক চেষ্টা করেই ফিরেছিলেন। ঠাকুরদার মৃতদেহ আর পাওয়া যায়নি কিন্তু তাঁর আঁকার সরঞ্জামের কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল ওই দ্বীপে। আর বাবা ফিরলেও তিনি কিন্তু আগের মানুষটি ছিলেন না। কারোর সঙ্গেই আর ভালো করে কথা বলতেন না। শুধু নিজের বাচ্চাদের সঙ্গে যখন সময় কাটাতেন তখন কিছুটা স্বাভাবিক থাকতেন। বাকি সময় চুপ করে কী যেন ভাবতেন শুধু। তিনি ফিরে এসে বলেছিলেন, ডলস্ আইল্যান্ডে কাজ করা কালীন বৃদ্ধ মারা যান হার্ট অ্যাট্যাকে। বাবা বাড়ি ফিরে বলেছিলেন যে মেরিয়নের ঠাকুরদা কোনো কিছুতে প্রবল ভয় পেয়ে মারা যান। এর বেশি তিনি কাউকে কিছুই বলতেন না। একটা অপরাধবোধ তাঁকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিচ্ছিল। সঙ্গে আরও কিছু ছিল বোধহয়। ভয় কি?

এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি

Boier Haat   |   © All rights reserved 2023.