ঠাকুরবাড়ির বারান্দা
শান্তা শ্রীমানী
শিল্পসৃষ্টি আর প্রতিভা বিচ্ছুরণের লীলাভূমি হয়ে উঠেছিল ঠাকুরবাড়ির দক্ষিণের বারান্দা। মহর্ষিভবনের দক্ষিণের বারান্দায় বসে দ্বিজেন্দ্রনাথ যেমন সৃষ্টি করেছিলেন 'স্বপ্নপ্রয়াণ', তেমনি রবীন্দ্রনাথের বহু সঙ্গীত সৃষ্টির উৎসভূমি এই বারান্দা। বৈঠকখানা বাড়ির দোতলার দক্ষিণের বারান্দায় মজলিশ বসাতেন গুণেন্দ্রনাথ। এখানে বসেই মুখে চুরুট দিয়ে ছবি আঁকতেন, ছাত্রদের আঁকা শেখাতেন অবনীন্দ্রনাথ। এই বারান্দাতেই আসতেন প্যান্ট-কোট-টাই পরা বড় বড় সাহেব-সুবো লাট বেলাট ম্যাজিস্ট্রেট। ড্রামাটিক ক্লাবের শ্রাদ্ধের ভোজও হয়েছিল এই বারান্দায়। ঠাকুরবাড়ির বারান্দা ছিল সেকালের সাহিত্য-সৃষ্টির পীঠস্থান। দুই ঠাকুরবাড়ির বারান্দাকে ঘিরে নানা কাহিনি উঠে এসেছে এই বইয়ের পাতায় পাতায়। এছাড়াও ঠাকুরবাড়ি বিষয়ক আরো চারটি রচনার অন্তর্ভুক্তি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছে।
-----------------------
দক্ষিণের বারান্দায় চওড়া চৌকিতে পা গুটিয়ে বসে হয় গড়গড়ার নল নয়তো মুখে চুরুট দিয়ে অবনীন্দ্রনাথ আঁকতেন, তাঁর মুখোমুখি বসে আঁকত তাঁর ছাত্রেরা। দক্ষিণের বারান্দায় আসতে কারো কোনো বাধা ছিল না।
সকালবেলাটা দক্ষিণের বারান্দায় চলত আঁকাজোখার কাজ। সন্ধেয় বসত সঙ্গীতের আসর। অবনীন্দ্রনাথ ম্যান্ডোলিন বা এসরাজ বাজাতেন । মতিবাবু গেয়ে শোনাতেন শিবের বিয়ের গীত বা পাঁচালি গান। গগনেন্দ্রনাথের ছেলে গেহেন্দ্রনাথের বিয়ের সময় দোতলার দক্ষিণের বারান্দা ঝাড়ে লণ্ঠনে আটচালায় গন্ধর্বনগর করে সাজিয়েছিলেন মতিবাবু।
পাঁচ নম্বর বাড়ির দোতলার দক্ষিণের বারান্দায় সরস্বতীপুজো হত। অবনীন্দ্রনাথ ছোট ছেলেদের মতো রঙবেরঙের কাগজের ফুল কেটে, গয়না তৈরি করে, ফুল পাতা দিয়ে ঠাকুর সাজাতে বসতেন। ছোটদের জন্য লিখতেন, আঁকতেন, খেলা তৈরি করতেন। এসবেই ছিল তাঁর আনন্দ।
তিন ভাইয়ের সারাদিনই কেটে যেত দক্ষিণের বারান্দায়। শীতকালে জোব্বা পরে রোদে পা ছড়িয়ে বসতেন তাঁরা। গ্রীষ্মকালে ভাত খাবার পর একটুখানি ঘুমিয়েই বেলা তিনটে নাগাদ যখন বারান্দায় গমগমে গরমের হাওয়া বইছে গগনেন্দ্র আর অবনীন্দ্র দুই ভাই চলে আসতেন দক্ষিণের বারান্দায়। নিজের নিজের জায়গায় বসে মনের আনন্দে আঁকতেন ছবি।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.