ভক্তিশতকম্ ও বাঙালির উত্তরাধিকার
সম্পাদনা : সুমিত বড়ুয়া
‘বৌদ্ধাগমচক্রবর্তী’ রামচন্দ্র কবিভারতী গৌড়বঙ্গের বাঙালি কবি। ত্রয়োদশ শতকের এই সাধক কবি সিংহলরাজ দ্বিতীয় পরাক্রমবাহুর রাজত্বকালে তৎকালীন বৌদ্ধজ্ঞানচর্চার পীঠস্থান সিংহলে বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্মের প্রতি প্রগাঢ় অনুরক্তিজাত ‘বৌদ্ধ’ কবিভারতী তিনটি সংস্কৃত গ্রন্থের রচয়িতা— ভক্তিশতকম্, বৃত্তমালা ও বৃত্তরত্নাকরপঞ্চিকা। ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে তুর্কী আক্রমণে বিপর্যস্ত বাঙালি রচিত মৌলিক কাব্য বা নাটক রচনার ক্ষেত্রে নূতন কোন স্বাক্ষর রাখতে না পারলেও রামচন্দ্র কবিভারতী এক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। কবির নানা ছন্দে রচিত অষ্টোত্তরশত শ্লোকবিশিষ্ট ধর্ম ও ভক্তিমূলক ভক্তিশতকম্ কাব্যগ্রন্থটি বুদ্ধজীবনী বা বৌদ্ধতত্ত্বমূলক গ্রন্থ নয়, তদ্গতচিত্তে আরাধ্য দেবতার উদ্দেশে প্রশস্তি-বন্দনা। হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন কবিদের ভক্তিমূলক সংস্কৃত শতকজাতীয় রচনার ধারায় রামচন্দ্রের ভক্তিশতকম্ অনন্য স্থানের অধিকারী। এই কাব্যে কবিহৃদয়ের কামনা ও ভোগের আকাঙ্ক্ষা নয়, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, আত্মনিবেদিত ভাবাবেগের আকুতি ও বৈরাগ্যের সুর ধ্বনিত হয়েছে। কবি জয়দেবের উত্তরাধিকারী এই কবির কাব্যে সমন্বয়ের ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। ভারতের ভক্তিধর্মের বিবর্তনের ইতিহাসের সঙ্গে বাঙালি কবির ভক্তিশতকম্ কাব্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী সংযোজন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.