২১ রাগিনী
সাধন চট্টোপাধ্যায়
জীবনে পথ চলতে কারও সঙ্গে দেখা হয়, আর হোঁচট খেতে হয় কারও সঙ্গে। অত্যাগসহন কেউ, কেউ বা অনাকাঙ্ক্ষিত। সাধন চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে জায়গা করে নিয়েছে এই দুই চরম ও তার মধ্যবর্তী যাবতীয় জীবন-উপাদান, মানুষি অনুভূতি বা অনুভূতিহীনতা সমেত। যে প্রিয় তাকে নিয়ে তো লেখাই যায়, কিন্তু বেঁচে-থাকা জুড়ে অপ্রিয় যা কিছু, তাকেও গল্পকার জড়িয়ে নিয়েছেন মরমি অনুভবে।তার ছাপ এই বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠায় দৃশ্যমান।
---------------------
গল্প সংকলনের 'রাজা টিকে থাকেন' গল্পটি থেকে নেওয়া কিছু অংশ —
হঠাৎ একটা বাঁক নিতেই, রাজামশাই শিকারের মুখটা খপাৎ জোরে চেপে ধরলেন কেঠো আঙুল দিয়ে। আর অন্য হাতটা গলায় উঠে শক্ত মুঠো হয়ে গেল। বজ্র আঁটুনিতে চেপে বসলেন রাজামশাই। আচমকা আঘাত, তার ওপর আবার কেঠো আঙুলের ফাঁসের ফান্দা, পথিকটি দমবন্ধ হয়ে তৎক্ষণাৎ মরে গেল। ঢলে পড়ল তার দেহ। সামনের দু'জন একটু এগিয়ে গেছে। তাঁরা তৃতীয় বন্ধুর অপেক্ষায় দাঁড়াল। ভাবল, এই বুঝি চলে আসবে।
হত্যার হ্যাপায় দুর্বল শরীরে রাজামশাই ক্লান্ত। হাঁপাচ্ছেন। মাথায় কোনও চিন্তা আসছে না। হঠাৎ খেয়াল হল দেহটা এক্ষুনি রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা দরকার। কেউ যদি দেখে ফেলে? রাজ্যের তিনি স্বয়ং রাজা। প্রাণপণে উত্তেজনায় তিনি হ্যাঁচকা টান দিতে গিয়ে কঙ্কালসার শরীর নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন সদ্য মৃতের ওপর। অভুক্ত থেকে শরীর এতটাই দুর্বল, রাজার হৃৎিপণ্ডটি বন্ধ হয়ে গেল। অথচ, মৃত রাজার হাড়ের খাঁচাটার নীচে চাপা পড়া পথিকটির নরম দেহটি তখনও বেশ গরম।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি