হিন্দু দেবতা - এক অনির্বেদ অডিসি
শিবাংশু দে
'হিন্দু' জাতির একটা প্রধান পরিচয় তাঁদের 'দেবতা'র নির্মাণ এবং বিনির্মাণের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছিলো। দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দ থেকে আর্য সভ্যতার নানা গোষ্ঠী বিভিন্ন 'দেবতা'কে কেন্দ্র করেই সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিলো। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আদিশংকর তাঁদের 'সনাতন ধর্ম'এর ছাতার তলায় এক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেবতারা 'এক' হননি। নিজস্ব রূপ-অরূপের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলাদাই থেকে গিয়েছিলেন। দেবতাকেন্দ্রিক ধর্মনীতি বা রাজনীতির অনন্বয় ও সমন্বয় ভারত ইতিহাসের মোড়গুলিতে বৃহৎ অংশ অধিকার করে আছে। 'দেবতা'দের ভূমিকা উপেক্ষা করে ভারতীয় যাপনের সার্বিক মূল্যায়ণ সম্ভব নয়। কারণ তাঁরা মানুষের দ্বারা, মানুষের জন্য ও মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্ট হয়েছিলেন। প্রায় দু'হাজার বছর ধরে তাঁরা যে শুধু নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছেন তা নয়, বিপুল মাত্রায় প্রাসঙ্গিকও থেকে গেছেন। দ্বান্দ্বিক দর্শনের প্রেক্ষিতে দেবতাদের পরিচয় ও তাৎপর্য বিচার করলে একুশ শতকেও তাঁদের প্রাসঙ্গিক থেকে যাবার জাদুটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি থেকে পাঠকেরা তারা প্রয়াস লক্ষ করবেন।
-----------------------
গ্ৰন্থের 'শ্যামা মা উড়াচ্ছে ঘুড়ি' প্রবন্ধটির কিছু অংশ —
সংসারত্যাগ করে তপস্যা করলে বোঝা যায় না সত্যিই কামনা নিবৃত্ত হয়েছে কি না? কামনার বস্তুর সান্নিধ্যে থেকে ইন্দ্রিয়জয় করতে পারলেই নিবৃত্তি প্রমাণ করা যায়। এই যুক্তি থেকেই পঞ্চ-ম'কার সাধনার উদ্ভব। চণ্ডীদাস এই সাধনার দুরূহতা বিষয়ে একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন। সার্থকভাবে পঞ্চ-ম'কার সাধনা আর মাকড়শার জালের বাঁধনে হিমালয় পর্বতকে আকাশে বেঁধে রাখা একই ব্যাপার। যিনি সাপের মুখে ভেককে নাচিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তিনিই পঞ্চ-ম'কারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন। প্রকৃত প্রস্তাবে অতি মুষ্টিমেয় সংখ্যক সাধকই হয়তো এই সিদ্ধির অধিকারী হতেন। বাকিরা ছিলেন পথভ্রষ্ট ব্যভিচারী। ব্যভিচারী তান্ত্রিকরা বিপজ্জনক লোক। এঁরা সামাজিকভাবে নানা ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত থাকেন। বিভিন্ন তন্ত্রে শিবের বয়ানে বহুধরনের গর্হিত আচারের প্রসঙ্গ লেখা আছে। হয়তো সেসব নিতান্ত প্রক্ষিপ্ত যোজনা। কিন্তু তা থেকে বহু সুযোগসন্ধানী প্রদূষিত মানুষ অজুহাত খুঁজে নেন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি