৫০১ সহজ সহজ রান্না
সাধনা মুখোপাধ্যায়
মুখবন্ধ :
রান্নার বইয়ের অভাব নেই। প্রতিদিনই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নানারকম রান্নার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। প্রতিদিনই টিভিতে নানান রান্নার প্রোগ্রাম দেখানো হচ্ছে। তবে আবার একটা রান্নার বই কেন এ-প্রশ্ন উঠতেই পারে। উত্তরে এই কথাটিই বলার-এই বই একটু নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা। পনির এখন নিরামিষ রান্নার মধ্যমণি। মাশরুমের স্থানও অতি উচ্চে। চিজও পিছিয়ে থাকবে নাকি। চাইনিজ, থাই রান্নাও এগিয়ে চলেছে। উত্তরবঙ্গের রান্নাও ঘরোয়া আসর থেকে ডাক দিচ্ছে। এই সব রান্নার গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই এই বই লেখা।
সতেরোটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বইয়ের প্রথম অধ্যায় মাইক্রোওয়েভে সহজ রান্না। এই অধ্যায়ে দেওয়া অতি সহজ কিছু রেসিপি। মাইক্রোওয়েভ এখন সময়ের সঙ্গে তাল রেখে মধ্যবিত্ত বাড়িতেও পৌঁছে গেছে। অনেক গৃহিণীরাই শিখে গেছেন মাইক্রোওয়েভের সহজ প্রয়োগ। এতে কম সময়ে রান্না হয়, তেল খুবই কম লাগে এবং শাকসবজির খাদ্যগুণও বজায় থাকে। এই সব কথা মাথায় রেখেই প্রায় ৬৪টি সহজ রান্নার পদ্ধতি বলা হয়েছে স্যুপ থেকে আরম্ভ করে আচার ও শেষপাতে মিষ্টি পর্যন্ত।
এর পরের অধ্যায়টির নাম পূজাপার্বণের নিরামিষ আহার। পূজাপার্বণে মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ রসুন তো খাওয়া হয়ই না, সেই সঙ্গে অন্ন খাওয়াও নিষেধের তালিকায় পড়ে। বিশেষ করে অবাঙালিরা বসন্তকালে এবং শরৎকালে প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত যে মা দুর্গার পূজায় নবরাত্রি উদ্যাপন করেন তাতে সব রকম আমিষ ও অন্ন খাওয়া নিষেধ। এই সময় ফলাহার চলে। গমের আটার বদলে তাঁরা পানিফলের আটার পরোটা খান। যে সব নিরামিষ আহার করা হয় ফলের চাট থেকে আরম্ভ করে ক্ষীর ও কুলফি পর্যন্ত সবই খুব সুস্বাদু। এগুলির প্রস্তুত প্রণালী সবিস্তারে বলা হয়েছে।
এর পরের অধ্যায়টি হল উত্তরবঙ্গের ঘরোয়া রান্না। খেলে মনে হয় জননীর হাতের ব্যঞ্জনের তুলনা নেই। দেশ-বিদেশের রান্নার বদলে এই মমতাভরা ডালচাপড়ি, শুক্তো, ঘণ্ট, বেম্বরী, পরমান্ন খেলে জিভ যেন জুড়িয়ে যায়।
চল্লিশটিরও বেশি রান্নার পদ্ধতি এখানে বলা হয়েছে।
তার পরেই আসছে পনির। পনির যেন এখন নিরামিষ রান্নার সম্রাজ্ঞী। ভোজবাড়িতে যাঁরা মাছ-মাংস খান না তাঁদের জন্য পনিরের পদ রান্না করা হয়। প্রায় ৪৬টিরও বেশি পনির রান্নার সহজ পদ্ধতি এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে।
তারপরেই মাশরুমের রাজ্যপাট। নিরামিষাশীদের কাছে মাশরুম এখন খুবই সমাদৃত। এর মধ্যে একটা কচকচে 'ক্রাঞ্চি' ভাব আছে তা তার স্বাদকে আরও মনোরম করে তোলে। প্রায় ২০টি মাশরুমের পদ রান্নার সহজ পদ্ধতি বলা হয়েছে এই অধ্যায়ে।
নিরামিষ আহার্যের তালিকায় চিজও আজ পেছিয়ে নেই। যদিও বেশির ভাগই তরিতরকারির ওপর কোরানো চিজ ছড়িয়ে তার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলা বা গার্নিশিংই চিজের প্রধান কাজ ছিল কিছুদিন আগে পর্যন্ত।
এখন কিন্তু ব্রেকফাস্টের টেবিলেও গরমাগরম টোস্টের সঙ্গে চিজ কিউব, চিজ স্প্রেড, চিজ স্লাইসও হাজির। এর বিশেষ একটা গন্ধযুক্ত নোনতা ভাব রসনাকে যেন আরও বেশি আকৃষ্ট করে। তেত্রিশটিরও বেশি চিজ রান্নার সহজ পদ্ধতি 'চিজের রকমারি' অধ্যায়ে লেখা হয়েছে। আরও আছে টি-পার্টির স্ন্যাকস ও ডিশ। বাড়িতে টি-পার্টি করতে গেলে আনারস দিয়ে কেমনভাবে 'বার্ড অফ প্যারাডাইস', লাউ বেগুন দিয়ে কচ্ছপ, লাউয়ের শাঁস বের করে নিয়ে দুপাশে দুটো পুতুলের হাতে দাঁড় ধরিয়ে দিয়ে 'কার্গোশিপ' তৈরি করতে হয় সবই বলা হয়েছে।
চটপটে স্ন্যাক্সগুলো 'ডিপে' ডুবিয়ে খেতে ভাল লাগবে। ভাল লাগবে ফলের রস মিশ্রিত লেমনেড অর্থাৎ 'মকটেল' খেতে। প্রায় ষাটটিরও বেশি রেসিপি দেওয়া হয়েছে এই দুটি অধ্যায় মিলিয়ে।
নবম ও দশম অধ্যায়ে লেখা হয়েছে চাইনিজ ও থাই রান্না। চাইনজ তো জনপ্রিয় এখনও-থাইও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রমশই। নবীনদের সমাদর সব সময়েই বেশি প্রবীণদের চেয়ে। কাজে কাজেই দুজনকেই স্বাগত জানানো ভাল। আমাদের ঘর আলো করে থাকবে যেমন চিনের চাইনিজ চিকেন স্যুপ, তেমনই থাই ফ্রায়েড নুডলসও।
এর পরের অধ্যায়ে আছে আমাদের প্রতিবেশী দেশের কিছু রান্না। এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি হল-বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মায়ানমার। 'বাড়ির পাশে আরশি নগর সেথায় পড়শি বসত করে।' দূর-দূরান্তে যাওয়ার আগে তো পড়শিদের খোঁজ খবর নেওয়া দরকার। তাই এই রান্না।
এর পরের অধ্যায়টি 'সুপের স্যুপ'। সারাদিনের ক্লান্তির পর এক বাটি গরম স্যুপ সারা শরীরে ছড়িয়ে দিতে পারে নতুন উদ্যম। স্যুপ এখন আর অপরিচিত অতিথি নয় তাকে স্বাগত। স্যালাড যেন মুড়ির সঙ্গে কাঁচা মুগে, শশা বা নারকোল চিবিয়ে খাওয়া। রোজকার ভাত-রুটির সঙ্গে টোম্যাটো শশা আর পেঁয়াজ তার ওপর একটু লেবুর রস ও নুন কি ম্যাজিক ঘটিয়ে দিতে পারে বাঙালি তা বুঝে গেছে। স্বাস্থ্যের দিক থেকেও স্বাদের দিক থেকেও। সেইজন্যই এর পরের অধ্যায়টি 'স্যালাড'।
বাঙালিদের কাছে শুধু মাছ-মাংস-ডিমই আমিষ নয়-পেঁয়াজ রসুনও আমিষ। কাজে কাজেই পুরোপুরি নিরামিষ অধ্যায়ে পেঁয়াজ-রসুনও বাদ গেছে রান্নার উপকরণ থেকে। রান্না করেই দেখুন না কেমন স্বাদযুক্ত এই সব পদ।
এর পরেই আছে দারুণ সব খাবার। মাছ-মাংস-ডিম। সবই আমিষ। প্রতিদিন একটা আধটা এইসব পদ রান্না করলে সকলের খাওয়ার আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে।
হ্যাঁ, এবারে ফুচকা খাওয়ার গল্প। যেমন খাচ্ছে স্কুলফেরত ছাত্রী টিফিনের পয়সায় তেমনই গাড়ি থামিয়ে ধনী গৃহিণী শালপাতার ঠোঙা হাতে টপাটপ গপাগপ। চাট ছাড়া গতি নেই। সেইজন্য এর পরের অধ্যায় চাট-চটপটা।
সব শেষে কুলফি। মধুরেণ সমাপয়েৎ। আইসক্রিম তো অনেক হল। অলিতে গলিতে এখন আইসক্রিমের গাড়ি। বাচ্চারা আইসক্রিমের কাঠি চুষছে। সেইজন্য কুলফিকে ঘরে আনতেই হবে। কুলফি তৈরি করার কোনও হ্যাপা নেই। শুধু বাড়িতে একটা Frost Free ফ্রিজ থাকালেই হল। শেষ পাতে কুলফি খেয়ে অবশ্য বলবেন-
সবার শেষে কুলফি খেলাম
কুলফি তোমায় জানাই সেলাম
সাধনা মুখোপাধ্যায়
১০.০৪.২০১৩
কলকাতা
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি