'অখন্ড ফুডকাহিনি
সম্পাদনা- কৌশিক মজুমদার
মুজতবা আলি সাহেব ঠিক বলেছিলেন। এমন কেউ নেই যে খেতে ভালবাসে না। শুধু এখানেই থামেন নি। এটাও বলেছিলেন, “খাদ্যের হাজারো প্রকার থাকলেও খাদক মূলত দুই প্রকারের। ভোজনপটু ও ভোজনবিলাসী। ভোজনবিলাসীরা হরেকরকমের খাবার সামনে থাকলেও বেছে বেছে খায়। আর ভোজনপটু যারা তাদের কোনো বাছ-বিচার নেই। আহার উপযোগী হাতের কাছে যা পায় তাই টপাটপ হজম করে। ভরা পেটেও খাওয়া শুরু করে”। এখানে অবশ্যি আলি সাহেবের ফরাসী জ্ঞান কিঞ্চিৎ কাজে এসেছে। ফরাসীতে খুব কাছাকাছি দুটো শব্দ আছে- গুরমাঁ আর গুর্মে। গুরমাঁ হলেন তারা, যারা খাবার জন্য বাঁচেন। স্বাদ গন্ধের সূক্ষ্ম অনুভূতি তাঁদের পারায় নেই বললেই চলে। যা পান, গোপাল অতি সুবোধ বালকের মত তাই চেটেপুটে খান। যতদিন বেঁচে থাকেন, নিজের (এবং অন্যের ক্ষতি করে) প্রবলভাবে খেয়ে যান। গুর্মেরা একেবারেই উলটো। পরিমাণ নয়, খাবার গুনাগুণই তাঁদের কাছে একমাত্র বিচার্য। তবে অনেকদিন অবধি খাওয়া ব্যাপারটা একেবারেই ঘরোয়া ছিল। নবাবদের খাস বাবুর্চি থাকতেন পাকশালায়। তবে শুরুতেই ব্যাপারটা এমন ছিল না। এই যে মোগলাই খানা নিয়ে এত নাচানাচি সেই মোগলদের প্রথম সম্রাট বাবুর তিনবেলা মাংস ঝলসে খেতেন। কাঠি গাঁথা সেই সব ভেড়ার মাংস খুলে খুলে খেতে হত। তবে সেই সময়ের এক পর্যটক এই মাংস খেয়ে “অতিরিক্ত তৈলাক্ত আর বিস্বাদ” বলেছিলেন, সে কথাও ভুললে চলবে না। মসলা জারিয়ে পরের সম্রাটরা যে রাজকীয় খানা খেতেন, তা বাবুরের কপালে জোটেনি, বোঝাই যাচ্ছে। হিন্দু রাজারাও যে শুধু শাক লতাপাতা খেয়ে থাকতেন তা নয়। দ্বাদশ শতকে চালুক্য রাজা সোমেশ্বর খাসা একটা বই লিখেছিলেন, নাম “ মানসোল্লাস”। সেই বইতে ঝাল ঝাল দই দিয়ে ডালের বড়া, এলাচ দিয়ে ভাজা শুকরের মাংস, ঝলসানো লেজ, কচ্ছপের মাংসের চিপস (তা নাকি ভাজা কলার মত খেতে লাগত) এর কথা বলা আছে। তবে রাজার ফেভারিট ছিল কাঁচা আম আর লবণ সহযোগে ঝলসে রাঁধা ধেড়ে ইঁদুরের মাংস। রাজা নিজে এই খাবারের কি প্রশংসা করেছেন কী বলব! এ যেন মনের শান্তি, প্রাণের আরাম।
এমন নানা গল্প আর খাওয়াদাওয়া নিয়ে আশ্চর্য বই... অখন্ড Foodকাহিনি
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি
Boier Haat™ | © All rights reserved 2024.